ইবি ইংরেজি বিভাগে ৩ মাসের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করাসহ ২১ দফা দাবি
- ইবি প্রতিনিধিঃ
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৪ PM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৪ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের বিদ্যমান অচলাবস্থা দূর করে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে প্রতি সেমিস্টারের কার্যক্রম শেষ করাসহ ২১ দফা দাবি জানিয়েছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২১ আগস্ট) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগণ হরকরা মিলনায়তনে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশের অনুমতি ছিলো না। এসময় বিভাগটির বিদ্যমান অচলাবস্থা দূর করতে ক্লাস, পরীক্ষা, শিক্ষক ও পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ে ২১ দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব দাবির কথা জানান বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিভাগটির বিভিন্ন বর্ষের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া রাশেদুজ্জামান, সাবেক উপাচার্য ও বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন উর-রশিদ-আসকারী, সাবেক উপ-উপাচার্য ও বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমান, সাবেক প্রক্টর ও বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ অন্যান্য শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- নতুন একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে প্রতিটা সেমিস্টারের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে হবে, দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থী বান্ধব ক্লাস রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষককে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিতে হবে। কোনো কারণে যথা সময়ে ক্লাস না নিতে পারলে সি-আর কে আগেই জানিয়ে দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের অযথা বসিয়ে রেখে সময় নষ্ট করা যাবে না। ক্লাস রুটিন প্রণয়নের সময় ক্লাসের সময় এবং বশ্বিবদ্যিালয়রে বাসের শিডিউলের সামঞ্জস্যতা আনতে হবে, ক্লাস সংখ্যার পরিমাণ কমিয়ে গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং কোর্স সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি (যেমনঃ কোর্স ম্যাটেরিয়াল, লেকচার শীট, প্রয়োজনীয় বই) সরবরাহ করতে হবে, স্বয়ং কোর্স শিক্ষককেই প্রতি ক্লাসের এ্যাটেনডেন্স নিতে হবে এবং কোর্স শেষে উপস্থিতির হার ও প্রাপ্ত নম্বর সকলের অবগতির জন্য বিভাগীয় নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে, যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে হবে এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ২০ দিন সময়ের মধ্যে নেটিশ বোর্ডে রেজাল্ট প্রদর্শন করতে হবে, প্রতিটা কোর্সে সর্বোচ্চ ২ টি টিউটোরিয়াল/ এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তার সঠিক মূল্যায়ন করে প্রত্যেকের প্রাপ্ত নাম্বার পরীক্ষার আগেই নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে, পরীক্ষার ফলাফল প্রদানে লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে এবং ইন্টারনাল এবং এক্সটার্নাল পরীক্ষকের মার্ক প্রকাশ করতে হবে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মনযোগে বিঘ্ন না ঘটানোর লক্ষ্যে পরীক্ষার কক্ষে অপ্রাসঙ্গিক আওয়াজ ও কথাবার্তা বন্ধের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ মিনিট আগে উত্তরপত্র প্রদান করতে হবে এবং যথাযথ পদ্ধতিতে আসন বন্টন নিশ্চিত করতে হবে, পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় অবলম্বনকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের নমনীয়তা প্রকাশ করা যাবে না, সম্পূর্ণ সেমিস্টারে ক্লাস রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবেন শুধু এমন শিক্ষকদেরই শুধু কোর্স প্রদান করতে হবে। তিনি তার ওপর অর্পিত দ্বায়িত্ব সুষ্ঠুরূপে সম্পাদন করবেন এবং এই বিষয়টি বিভাগের সভাপতি এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উভয়ই নিশ্চিত করবেন, সম্মানিত শিক্ষকগণ পর্যাপ্ত প্রিপারেশন নিয়ে ক্লাস নিতে আসবেন এবং ক্লাসে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিতে পারলে ছাত্রদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে পরবর্তী ক্লাসে সঠিক উত্তর জানিয়ে দেবেন, বিভাগে শিক্ষকদের দলীয় লেজুরবৃত্তিক সকল নোংরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হয়ে শিক্ষার্থী বান্ধব হতে হবে, ইভটিজিং এবং শিক্ষার্থী হয়রানির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অযাচিত কারণে কোনো শিক্ষার্থীর সাথে দূর্ব্যবহার করা যাবে না। এমন কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের কেনোরূপ হয়রানি না করে উক্ত বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন, দূরব্যবহারকারী শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, বিভাগে স্বপ্রনোদিত হয়ে শিক্ষকদের নেয়া ক্লাস, পরীক্ষা বা এ্যাসাইনমেন্ট এসবের মূল্যায়ন (মাসিক ভিত্তিতে) করবে এবং এই ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষকদের ক্লাস মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে (রেটিং পয়েন্ট আকারে) এবং বিভাগ সেটা মাসিক রিপোর্ট আকারে বিভাগের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করবে, যেকোনো ধরণের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক নোংরা রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিভাগ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যে/ যারা নোংরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকবে এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তার/তাদের বিষয়ে বিভাগের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রতিটি ক্লাসরুমের অবকাঠামোগত সংষ্কার করতে হবে। যেমন: ত্রুটিমুক্ত সাউন্ড সিস্টেম, এসি, ফ্যান ও লাইট। প্রয়োজন অনুসারে অতিদ্রুত সংষ্কার করতে হবে, সেমিনার লাইব্রেরীর অবকাঠামো গত দমশ্যমান উন্নয়ন করতে হবে। নূন্যতম ১০ টি দৈনিক বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কোর্সের প্রতিটি বইয়ের একাধিক কপি সংরক্ষণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ইংরেজি মাসিক পত্রিকা (নূন্যতম ১০ টি) নিয়মিত রাখতে হবে, জরুরী ভিত্তিতে নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত এবং বিশেষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে (পরীক্ষার সময় বাচ্চার জন্য, ব্রেস্ট ফিডিং এবং অন্যান্য) এটাস্ট বাথরুম সহ স্বতন্ত্র কমনরুমের ব্যবস্থা করতে হবে, কম্পিউটার সেবা সহ সকলের জন্য উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবা জন্য নিশ্চিত করতে হবে। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সেমিনার লাইব্রেরি উন্মুক্ত থাকা নিশ্চিত করতে হবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং বার্ষিক বনভোজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের উপস্থিতি এবং বিভাগীয় অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিভাগ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে একটা দৃশ্যমান পরিবর্তনের কথা বলেছি। এর মধ্যে সন্তোষজনক কোনো পরিবর্তন না হলে পুনরায় জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত আছি। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে সকল শিক্ষক মিলে মিটিং করে দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে একটা রোডম্যাপ তৈরি করবো। যেহেতু ইংরেজি বিভাগে দীর্ঘমেয়াদী সেশন জট আছে। তবে জট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভাগের সকলেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।