ঢাবির ট্যুরিজম বিভাগের
দুই শিক্ষকের অপসারণ ও দুইজনকে অবাঞ্ছিতের দাবি শিক্ষার্থীদের
- ঢাবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:১৩ PM , আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৩ PM
শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করা, কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি দেয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষকের অপসারণ ও দুই শিক্ষককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে (ডুজা) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
অপসারণ দাবি করা হয় বিভাগের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক সামশেদ নওরীনের এবং অবাঞ্চিত ঘোষণা করার দাবি জানাঊন হয় সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মুনীম ও মিনা মাহবুব হোসাইনকে।
অধ্যাপক আফজালের নানা অন্যায় ও অনিয়ম উল্লেখ করে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহতাসিন বিল্লাহ বলেন, “অধ্যাপক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের কারণে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ দিয়ে দুই বছরের জন্য অবসর দেয়া হয়েছিল। অবসরে থেকেও তিনি নানা কুকর্ম করেন। উনি ওনার শ্যালিকা সামশেদ নওরীনকে নিয়োগের নিয়ম লঙ্ঘন করে বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সেটার জন্য নওরীন ম্যামের মার্কশিট পর্যন্ত আমাদের কাছে আছে।”
যৌন নিপীড়নের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, “আফজাল স্যার পঞ্চম, নবম, দশম, এগারোসহ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন, এমনকি সম্প্রতি আমাদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দুই-তিন জন শিক্ষার্থীকেও যৌন নিপীড়ন করেছেন। বিভাগের ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের বেছে নিয়ে তাদেরকে অন্যায় ও কুপ্রস্তাব দিতেন। যদি কেউ তার কথা না শুনতো তাহলে একাডেমিক ও ব্যক্তিগত জীবন দূর্বিষহ করে তুলতো।”
সহযোগী অধ্যাপক সামশেদ নওরীনের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক। আমাদের বিভাগের ও রোকেয়া হলের যেসব শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল তাদের সহায়তার জন্য আমরা বিভাগ থেকে একটি ফান্ড কালেকশন করেছিলাম সেটিকেও বন্ধ করার জন্য ম্যাম চেষ্টা করেছিল। আন্দোলনের কারণে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে হয়রানি হয়েছে এই পুরো ঘটনা তিনি অস্বীকার করেছেন।”
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাহদী আল মাহমুদ সাবিক, মিনা মাহবুবের অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, “আমরা এগারো ব্যাচের ছিলাম। আমাদের এক কোর্সে ৬৫ জনকে ফেইল করানো হয়। এরপর আরেকটা সেমিস্টারে ৭০ জনকে ফেইল করানো হয়, একই টিচার দ্বারা এবং এইটা তো আকস্মিক ভাবে হয় নাই। ওনার ব্যক্তিগত রাগ মেটানোর জন্য তিনি আমাদের ওপর এইটা করেছেন এবং এর আগেও এটা করেছেন। ক্লাসে দরজা খুলতে একটু শব্দ হয়েছে কিংবা একটা স্কেল পড়েছে এজন্য শাস্তি হিসেবে সবাইকে সিঙ্গারা-খিচুড়ি খাওয়াতে হবে; এই ধরনের অমানবিক কাজ উনি করতেন।”
মুনীমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের আগের ব্যাচ অর্থাৎ দশম ব্যাচকে গণহারে ফেইল করিয়েছেন। আমাদের ব্যাচের একজনকে যৌন নিপীড়ন করেছেন, যেটার জন্য লিখিত বক্তব্য আমাদের হাতে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের বিভাগ থেকে নয় দফা মেনে নেয়া হয়েছে। এখন আমাদের দফা একটাই অধ্যাপক আফজাল ও সহযোগী অধ্যাপক সামশেদকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে এবং মিনা মাহবুব ও মুনীমকে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অবাঞ্ছিত করতে হবে।”
“আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। ওনাদের মতো টিচার যদি আবার ফিরে আসে তাহলে এটা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। এই বিষয় নিয়ে আমরা ভীত সন্ত্রস্ত। আমরা চাই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক কারণ আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর আসার পর আমরা তাদের কাছে অভিযোগ দিবো।”
এসময় এই শিক্ষার্থী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘তারা নিজেরা যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে ভালো, না হলে আমরা হার্ট লাইনে যেতে বাধ্য হবো।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগের আবু জাফর সিয়াম, মো. মারুফ, ফাবিহা বুশরা ও নাসরিন আকতারসহ বিশের অধিক শিক্ষার্থী।