ইবির ভিসি হচ্ছেন মদ্যপ ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ড. মতিনুর!
- মুনিম, ইবি:
- প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫০ PM , আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০৯ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন গভীর রাতে ছাত্রী হলের সামনে মাতলামি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মতিনুর রহমান। এমন আলোচনা চাউর হয়েছে ইবি ক্যাম্পাসে। নিজ বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক, অর্থ কেলেঙ্কারি, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মাঝে বিভক্তি তৈরি করা, নাম জালিয়াতি করে কিছু শিক্ষককে জিয়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ দেখানো, মদের বোতল দিয়ে পুলিশ পিটানো এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া পরিষদের একাধিক শিক্ষক থেকে জানা যায়, ড. মতিনুর রহমান ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট মদ খেয়ে গভীর রাতে ছাত্রী হলের সামনে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় মাতলামি করতে থাকেন। সে সময়ে মাতাল অবস্থায় হলে ঢোকার চেষ্টা, মদের বোতল দিয়ে পুলিশ পিটানো ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করারও অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের অভিযোগে ইবি থানায় মতিনুরের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নং-৫) দায়ের করে পুলিশ। এছাড়া, ভালো ফলাফলের বিনিময়ে নিজ বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রী দেখতে সুন্দরী হওয়ায় শিক্ষক মতিনুর রহমানের নজরে আসেন। পরে ওই ছাত্রীকে ভালো ফলাফলের প্রলোভন দেখিয়ে বশে আনেন তিনি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করারও স্বপ্ন দেখান মতিনুর। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীর রেজাল্ট ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। প্রথম বর্ষে রেজাল্ট ছিল ৩.৪১। পরবর্তীতে ২য় বর্ষে ৩.৬৩, তৃতীয় বর্ষে ৩.৮১ এবং চতুর্থ বর্ষে সেই রেজাল্ট গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৮১। বেপরোয়া জীবনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হল থেকে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ড. মতিনুরের অধীনে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে সাজিদ হোসেন নামের এক এম ফিল গবেষক ভর্তি করার ঘটনায় ক্যাম্পাসে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্স এমডিএস’র সমন্বয়কারী থাকা অবস্থায় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যাপক মতিনুরকে পদচ্যুত করা হয়। ক্যাম্পাস সূত্রে আরও জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মতিনুর রহমান বিভিন্ন সময় বিএনপিপন্থীদের ভেতর দলাদলি ও ভাঙ্গন সৃষ্টি করেন। প্রথমে তিনি জিয়া পরিষদ ভেঙে পেশাজীবী পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এরপরে আবার জিয়া পরিষদে ফিরে আসেন। সম্প্রতি জিয়া পরিষদ ভেঙে সাদা দল তৈরি করেন। অভিযোগ ওঠে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের যোগসাজসে তিনি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে সাদা দলের প্যানেল দেন। ফলে, বিএনপিপন্থীদের ভোট বিভক্ত হয়ে শিক্ষক সমিতি হারায় ইবির জাতীয়তাবাদীরা। ইতিপূর্বে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থীদের ঐক্যের কারণে আওয়ামী আমলেও শিক্ষক সমিতিতে তাদের আধিপত্য ছিল।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এমন একজন ভিসি চাই যিনি হবেন সৎ, দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব। এছাড়া সর্বমহলে তিনি ক্লিন ইমেজের অধিকারী হবেন। অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মতিনুরের রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তিবর্গের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি,প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।