বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৮২

শিক্ষার্থী
  © সংগৃহীত

নগরীতে একটি বাড়ির নির্মাণ কাজের বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮২জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয়টি বাসসহ বিএম কলেজের বিভিন্ন স্থাপনা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. মুহসিনউদ্দীন ও বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক জানিয়েছেন, নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুধবার সভা করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।

দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ব্যাপটিস্ট মিশন রোডে একটি বাড়ির নির্মাণকাজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।

বিএম কলেজ শিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাতুল অনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বক্তব্যে জানান, ব্যাপটিস্ট মিশন রোডে তাদের বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবার। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি তার কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে যান। পরে সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিএম কলেজ সমন্বয়করা ঘটনাস্থলে গিয়ে জোয়ার পরিবারের কাছে বিষয়টি জানতে চায়। তখন জোয়ার পরিবার তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খবর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে হামলা করলে বিএম কলেজের কয়েকজন সমন্বয়ক আহত হন।

প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষার্থীরা জানান, এ নিয়ে মঙ্গলবার দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকালে দুই শিক্ষাঙ্গনে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধনও করা হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে নগরীতে পেয়ে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে বিএম কলেজে শিক্ষার্থীরা। এ খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী একটি বাস নিয়ে নগরীর বটতলা এলাকায় আসে। তখন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও চালকসহ ১৫/২০ জনকে আহত করে। এই হামলার খবর পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আরও সংঘটিত হয়ে কয়েকটি বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় সঙ্গে করে ট্রাক ভর্তি পাথর, বেশ কয়েকটি থ্রি হুইলার ভর্তি ইটের টুকরা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সবার হাতেই রড, পাইপ, লাঠি আর ধারালো দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।

বিএম কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মাহফুজ বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক তিনটি হল এবং শ্রেণি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা বিএম কলেজের পাঁচটি বাস ভাঙচুর করে। পরে রাত পৌনে ৩টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা।

এই হামলার সময় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে আটক হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। তাদের কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে রাতভর আটকে রাখা হয়। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আটক শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হয়।

বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক বলেন, “রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিএম কলেজে হামলা করে। তারা কলেজে ক্যাম্পাসে ঢুকে গাড়ি, আবাসিক হল, আবাসিক ভবন, বিজ্ঞান ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করে।” “এ সময় কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আসেন। তারা বিএম কলেজের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মুচলেকা দেওয়ার পর ছয় শিক্ষার্থীকে অক্ষত অবস্থায় সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জিম্মায় দেওয়া হয়।”

মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়, সরকারি বিএম কলেজে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই সব ব্যয় বহন করবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অধ্যক্ষ আমিনুল হক আরও জানান, এ ঘটনা নিয়ে বুধবার কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা হবে। সেখানে এ বিষয় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. মুহসিনউদ্দীন বলেন, “আমরা একেক জনের কাছ থেকে একেক রকমের তথ্য শুনছি। তদন্ত না করে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে না। ” তিনি বলেন, “রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে খবর পাই দুই শিক্ষার্থীকে বেধড়কভাবে মারধর করে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে যাবে। “তখন তাদের শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স চালককে বাধ্য করে একটি বাস নিয়ে বরিশাল নগরীতে যায়। তারা নগরীতে গেলে বাসের উপর হামলা চালানো হয়। বাস ভাঙচুরসহ শিক্ষার্থীদের আহত করা হয়।”

অধ্যাপক মুহসিনউদ্দীন আরও বলেন, “খবর পেয়ে আরও শিক্ষার্থী বিভিন্ন যানবাহনে বরিশাল নগরীতে গিয়ে বিএম কলেজে হামলার চেষ্টা করে। সেখানে তারা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে উল্টো ব্যাপক মারধরের শিকার হয়েছে। “তাদের ছয় জনকে আটকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। পরে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মিলে তাদের উদ্ধার করেছি।” এ নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “৮২ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।”