যৌন নিপীড়ন সেল পুনর্গঠনসহ ১২ দাবিতে ঢাবি ভিসিকে স্মারকলিপি নারী শিক্ষার্থীদের
- ঢাবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ PM , আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ PM
-10934.jpg)
যৌন নিপীড়ন সেল পুনর্গঠন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়ন সেল স্থাপন করা, অভিযোগ দায়ের করার পরবর্তী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করাসহ ১২ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল নারী শিক্ষার্থী।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর একটার দিকে উপাচার্যের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
“ আমরা দুপুর একটার দিকে উপাচার্য স্যারকে যৌন নিপীড়ন সেল পুনর্গঠন কার্যকর করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসকে নারীর নিরাপদ করার দাবিসহ ১২ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি,” দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূজিয়া হাসিন।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমই নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রায়ই শিক্ষক অথবা অন্য শিক্ষার্থী কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই নিপীড়ন কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করেছে। ক্ষমতাতন্ত্রের সাথে পুরুষতন্ত্রের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে তুলেছে আমাদের সামনে। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী ও মেয়েদের যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালতের ১১ দফা নির্দেশনা থাকার পরেও কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটির পদক্ষেপ ও কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো কার্যকর প্রতিকারব্যবস্থাই তৈরি করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যত্যয় ঘটে নাই।
“ফলস্বরূপ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদসহ বহু যৌন নিপীড়কের যথাযথ বিচারকার্য সম্পন্ন হয় নাই। যৌন নিপীড়ক হিসেবে চিহ্নিত থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. সাইফুল ইসলামকে স্বপদে বহাল রাখার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যৌন নিপীড়কদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।”
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সহিংসতার শিকার নারী শিক্ষার্থীরা অনেক সময় তাদের অভিযোগ সামনে তুলে ধরতে পারে না। ভিকটিম ব্লেমিং, স্লাট শেমিং এর পাশাপাশি নিপীড়ক শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অভিযুক্ত দায়েরকারীকে ফেল করিয়ে দেয়াসহ অ্যাকাডেমিকভাবে নানা রকম হেনস্তা করতে পারে-এই ভয়েও তারা আড়ষ্ট থাকে। অভিযোগ নিষ্পত্তি হতে মাসের পর মাস সময় লাগে যা ভিকটিমের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলকে যত দ্রুত সম্ভব পুনর্গঠন করে কার্যকর করতে হবে এবং উক্ত সেলে শিক্ষার্থী প্রতি নিধি নিশ্চিত করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, পূর্ববর্তী সকল অভিযোগ নতুনভাবে তদন্ত করার পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে নারীবান্ধব করতে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত সংস্কার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীরা ইউটিআই (Urinary Tract Infection) দ্বারা আক্রান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরাও এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট না থাকা এবং টয়লেট গুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরিস্থিতি খারাপ থাকা- নারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ। এছাড়া, নারী শিক্ষার্থীদের হল গুলোতে আত্মহত্যা রোধের নামে সিলিং ফ্যান স্থাপন না করা, ছাদ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত। যার ফলে, দিনের পর দিন নারী শিক্ষার্থীরা অসহনীয় দিন পার করছে। অবিলম্বে, নারী শিক্ষার্থীদের হল সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি হলগুলোতে ফিলিং ফ্যান স্থাপন করতে হবে। প্রতি ডিপার্টমেন্ট ও হলে প্রফেশনাল কাউন্সিলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দেয়া ১২ দাবির মধ্যে রয়েছে, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল পুনর্গঠন করে চালু করতে হবে; প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল স্থাপন, সেলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং উক্ত সেলটি যেন কেন্দ্রীয় নিপীড়ন বিরোধী সেলের সাথে সমন্বয় করে সব ধরনের অভিযোগ সুরাহা করে তা নিশ্চিত করতে হবে; অভিযোগ দায়ের করার পরবর্তী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে; অভিযুক্ত কোনো শিক্ষক ঘটনার তদন্ত চলাকালীন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; বিগত যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্তদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে; যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তৎক্ষনাৎ রেসপন্স করার জন্য প্রক্টোরিয়াল টিমের 'স্পেশাল ফোর্স' গঠন করতে হবে। তবে, এই ফোর্স যাতে কোনোভাবেই ভিক্টিম ব্লেমিং না করে তা নিশ্চিত করতে হবে; অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংগুলোতে নারীদের ওয়াশরুমের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। সকল ওয়াশরুমের মেইনটেইনেন্স ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে; নারীদের হলে অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে; নারীদের প্রতিটি হলে সিলিং ফ্যান স্থাপন করতে হবে। মেয়েদের হল সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে; ক্লাসরুম ও আবাসিক হলে সকল প্রকার স্লাট-শেমিং, নারী বিদ্বেষী মন্তব্য ও পোশাক নিয়ে জেরা করা বন্ধ করতে হবে; এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশেষ করে হলগুলোর সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূজিয়া হাসিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আনিয়া ফাহমিন, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ইসরাত জাহান ইমু, ফাইন্যান্স বিভাগের মালিহা তাবাসসুম ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাহনুমা আহমেদ নিরেট।