শিক্ষা সংস্কার প্রসঙ্গে ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট-এর 'কেমন গ্রাজুয়েট চাই' সেমিনার
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ PM , আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ PM
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি) কর্তৃক গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে ২.০ শিক্ষাসংস্কার প্রসঙ্গ: কেমন গ্রাজুয়েট চাই শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিআইআইটি’র মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ।
ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, জাতীয় ঐক্যের মহেন্দ্রক্ষণে দেশে অবহেলিত থাকা শিক্ষাব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এদেশের আপামর জনগণের দর্শন, সংস্কৃতি, ও সভ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষানীতি পরিপূর্ণভাবে প্রণয়ন করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান মানুষ। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও, অনানুষ্ঠানিকভাবে সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি সবসময় গুরুত্বারোপ করে এই বৃহৎ ধর্মীয় গোষ্ঠিটি। এরই অংশ হিসেবে এদেশের ব্যক্তি অর্থায়নে গড়ে উঠে অসংখ্য মক্তব, এতিমখানা, নূরানী মাদ্রাসাসহ আনুষ্ঠানিক সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতির সুযোগে, মানুষ যখন অনানুষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে ঠিক তখনই কিছু বিষয়ে নতুন করে আশংকাও তৈরি হচ্ছে। অনেক সময়, ধর্মীয় উগ্রবাদ, কুসংস্কার, এবং ধর্মের বেশ কিছু বিষয়ে ভ্রান্ত ব্যাখ্যার প্রচার প্রসার ঘটছে। এসব কিছু বিবেচনায়, এদেশের সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এক প্রকার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
সমন্বিত শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সুসংহত জাতি গঠন ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম দরকার জাতীয় আদর্শ, লক্ষ্য, এবং মূল্যবোধের সমন্বয়ে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন । ইংরেজি শিক্ষার ছাত্র ছাত্রীদের কে দেশীয় সংস্কৃতিতে উৎসাহিত করাটা যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি কওমি ঘরনার শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় মানিয়ে নেয়াও একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সাধারণ ও আলীয়া ধারার সমন্বয়ও একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । দেশের সংস্কৃতি, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের মূল্যবোধ, সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে একটি স্পষ্ট, বিজ্ঞানভিত্তিক, সর্বজনীন এবং সমাজের প্রযোজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় লক্ষ্য ও জাতীয় শিক্ষাদর্শন তৈরি করা প্রয়োজন। যেখানে শিক্ষার ধারা-উপধারাকে স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্যে রেখে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐকা ও সর্বজনীন কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।
কেবলমাত্র নিদিষ্ট ভিশন সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তবুও সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রমের পথে এখনো বহু বাধা বিপত্তি রয়েছে, যা অনতিবিলম্বে স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি- এ তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
সর্বোপরি তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার ক্রমবিকাশ, ইসলামী শিক্ষার ক্রমবিকাশ, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ইসলামি শিক্ষার মধ্যকার মৌলিক পার্থক্য, আধুনিক শিক্ষার ক্রমবিকাশে মুসলমানদের অবদান, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রসারে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিশ্রুতি/নির্দেশনা, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব, বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা ও জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর পর্যালোচনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনা করেন।
শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন খাত গুলোকে সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। এসময় তিনি সমন্বিত শিক্ষানীতি ও সমন্বিত পাঠ্যক্রম উভয়ের উপরে ১৪ দফা, সমন্বিত শিক্ষণ প্রশিক্ষণের উপরে ৯ দফা, সমন্বিত মূল্যায়ন কৌশল এর উপরে ৩ দফা, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার উপরে ৭ দফা এবং গবেষণা ও প্রকাশনার উপরে ১১ দফা দাবি পেশ করেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, এখনকার যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। এই আধুনিকতার যুগে শুধুমাত্র এথিক্স (নৈতিকতা) বললেই হবে না, আপনাকে একই সঙ্গে এক্সসিলেন্স (দক্ষতা) অর্জন করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে আপনি যদি পারদর্শিতা দেখাতে না পারেন, তাহলে হবে না। এই যুগে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিলস। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা, কোরআন হাদিস বোঝার জন্য তাদেরকে আরবি ভাষা শিখতে হবে। অন্যতম ৩ টা ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারটিতে আরো বক্তব্য রাখেন ওআইসি’র ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী, ঢাকার সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলাম ও মা’হাদুল ফিকরি ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ মুসা আল হাফিজ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকাস্থ এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুন নাহার মুনমুন।
উল্লেখ্য, বিআইআইটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চিন্তা ও জ্ঞান সংস্কারে নিবেদিত একটি থিংক ট্যাঙ্ক। যেটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে চিন্তা-জগতের অন্ধত্ব ও গোঁড়ামী মোচনের মহৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নে গবেষণা করছে ও প্রকাশনা বের করছে। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে চিন্তার পুনর্গঠন ও জ্ঞানের একীভূতকরণের লক্ষ্য নিয়ে অনুবাদ, শিক্ষণ প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সচেতনতা তৈরি ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।