সমন্বয়কদের একাংশের বিরুদ্ধে স্লোগান বিকৃতির অভিযোগ, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা 

ঢাবি
  © ফাইল ফটো

২৪ এর ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বারুদ হয়ে জেগে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আর সেই বারুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলো “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার” স্লোগান। ১৪ জুলাই মধ্যরাতে এই স্লোগানের মিছিলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ সরকারের টনক নড়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লব। কিন্তু এই স্লোগানের জায়গায় অন্য কোনো স্লোগান আনার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

গতকাল শনিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) রাতে ১৪ জুলাইকে স্মরণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেন। আসিফ মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছিলো এরকম, “কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না। সেদিন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সুপ্রিমেসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪ই জুলাই!”

একই বিষয়ে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, নুসরাত তাবাসসুম, চট্রগ্রাম বিশব্বিদ্যালয়ের খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাদের সবার ফেসবুক পোস্টে "কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার!" স্লোগানকে তুলে ধরা হয়েছে। 

তাদের এমন স্ট্যাটাসের পর পরই শুরু হয় বিতর্ক। আন্দোলনের মূল স্লোগান বাদ দিয়ে অন্য একটি স্লোগানকে প্রতিষ্ঠিত করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী ১৪ জুলাই রাতের স্লোগানের ভিডিও প্রকাশ করে মূল স্লোগানকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি 'আমি কে? তুমি কে?, রাজাকার রাজাকার ' এই স্লোগানই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সূচনা করেছিল।

স্লোগান বিকৃত করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ঢাবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ তুষার বলেন, 'সমন্বয়ক প্যানেল থেকে যে স্লোগান পোস্ট করছে তার স্থায়িত্ব খুব একটা ছিল না। আরো অনেক ধরনের স্লোগান দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। যেটি আন্দোলন মূল স্লোগান হয়ে গেছিলো। হঠাৎ করে সমন্বয়করা কোন অর্থে স্লোগান পরিবর্তন করছে?  সে অর্থে- হ্যাঁ  সমন্বয়করা স্লোগান বিকৃত করছে নিজেদের অসাধারণ প্রমাণ করতে।'

ঢাবি শিক্ষার্থী মিশকাত বলেন, ২৪ এর ইতিহাস কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের একার ইতিহাস না। এটা গোটা দেশবাসীর ইতিহাস। এই ইতিহাস আমরা বিকৃত করতে দিবোনা কাউকে। আমরা নিজেদেরকে তখন কেন রাজাকার বলেছিলাম, সেটা আমরা সবাই জানি। এটা নিয়ে মজা করা কিংবা বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। 

এ প্রসঙ্গে রবিবার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে প্রকৃত বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন।  ফেসবুক স্টাটাসে নাহিদ ইসলাম বলেন, “তুমি কে? আমি কে?রাজাকার রাজাকার' এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান ছিলো। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি ছিল তা এই স্লোগানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছিলো সেই রাতে। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ সেই রাতেই ভেঙে গেছিলো। অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে আরো কয়েকটা দিন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল কেবল।

১৫ তারিখ সকালে আমাকে বহু মিডিয়া ফেইস করতে হইছে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে।৷ আমার ব্যাখ্যাটি ছিল অনেকটা এরকম—"রাজাকার শব্দের কোনো প্রাসঙ্গিকতা এই আন্দোলনে ছিল না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।