যৌন নির্যাতনের পর এবার অফিস কক্ষ ভাংচুরের অভিযোগ রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

রাবি
  © সংগৃহীত

যৌন নিপীড়নের দায়ে সিন্ডিকেট কর্তৃক ২ বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এবার বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অফিস কক্ষ ভাংচুর করাসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনামুল হকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী একই বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

এর আগে, গত ২০২৩ সালের ২১মে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ ও তৎকালীন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া উপাচার্য বরাবর ৯জন শিক্ষকের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. এনামুল হককে দুই বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

সেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অব্যাহতি থেকে মুক্তি পেতে ড. নাজমা আফরোজকে শিক্ষার্থীদের দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন, অফিস কক্ষ ভাংচুর ও তার কক্ষের নেমপ্লেট ভাংচুর করান ড. এনামুল হক। এমন অভিযোগ এনে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষিকা।

অধ্যাপক নাজমা তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মজিবুল হক আজাদ খান গত ৮ সেপ্টেম্বর বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং কল করেন। মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে সভাপতির কাছে মিটিং এজেন্ডা জানতে চাইলে সঠিক উত্তর না দিয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক বিভাগের ছাত্র এবং কিছু বহিরাগত ছাত্র একত্রিত হয়ে আমাদের বিভাগের ৫২৫ তম সিন্ডিকেট সভার ৩৮ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত যৌন-নিপীড়ক শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. এনামুল হককে বিভাগে ফেরত আনার জন্য হট্টগোল শুরু করেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সভাপতি এবং তাঁর অনুগত ২-১ জন শিক্ষক আমাদেরকে মনোবিজ্ঞান গবেষণাগার-১ এ নিয়ে যান এবং সেখানে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করায় আমাদের সকল শিক্ষককে উক্ত গবেষণাগারে অভুক্ত অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আটক রাখে।

মুক্ত হবার পর সমস্ত ঘটনা পর্যালোচনা করে জানতে পারি যৌন নিপীড়ক শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. এনামুল হক তার কতিপয় সহযোগী এবং বখাটে কিছু ছাত্রের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদেরকে আটক রাখে। উক্ত অভিযুক্ত শিক্ষক এবং বিভাগের সভাপতি এবং তাদের সহযোগী ২-১ জন শিক্ষকের কারণে আমি শিক্ষক হিসেবে বিভাগে উপস্থিত হয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর সভাপতির অফিস কক্ষে পুনরায় উক্ত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় এবং বিভাগে আমার এবং প্রফেসর নূরে আলম সিদ্দিকী, ড. কাজী ইমরুল কায়েশ, মাহবুবা কানিজ কেয়া ও সাদেকা বানু-র নেমপ্লেট ভাঙচুর করে এবং বিভাগের অফিস কক্ষসহ সকলের কক্ষে তালা লাগিয়ে এবং ফুলের টব ভাঙচুর করে ভীতিজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। পরে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আমরা সেখান থেকে মুক্ত হই। বিভাগে বর্তমানে নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ কোনোটিই বিদ্যমান নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ড. নাজমা আফরোজ বলেন, আমার সাথে পরপর দুইদিন এ ঘটনা ঘটেছে। আমি খুব ভীতিকর অবস্থায় আছি। আমি কোনভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছি না। যৌন নিপীড়ক শিক্ষক ড. এনামুল তার শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। আমি সঠিক বিচারের আশায় উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং থানায় জিডিও করবো বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. এনামুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। আমার সাথে তো ডিপার্টমেন্টের আপাতত সম্পর্ক নেই। এখন কে বা কারা এমনটা করছে তা বুঝতে পারছিনা। তবে ডিপার্টমেন্ট থেকে মাঝেমধ্যে কোনো প্রয়োজন বা কোনো কাগজপত্রের দরকার পড়লে আমাকে ফোন দেয় এতটুকুই। কিন্তু সার্বিক বিষয়ে আমি অবগত নই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ আজকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি বেশ জটিল। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।