থানায় আহত শামীম মোল্লাকে পরিবারের সাথে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ; দাবি পরিবারের

জাবি
শামীম মোল্লা  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ক্যাডার শামীম মোল্লা ওরফে শ্যুটার শামীমকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইটে আটক করে ছাত্র-জনতা। পরে সেখানে তাকে মারধর করে নিরাপত্তা শাখার হাতে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে দুই দফায় সেখানে আরো মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সাবেক ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সেখানে দেখা যায়। পরে রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শামীমকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। 

পুলিশ দাবি করেন, শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম মারা যায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে বলেন, শামীমকে তারা মৃত অবস্থায় পেয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। 

তবে নিহত শামীম মোল্লার ভাই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ী শাহীন আলম বলেন, আমরা খোঁজ পেয়ে থানায় ছুটে যাই, সেখানে আমাদেরকে শামীমের সাথে দেখা করতে দেয়নি। পরে শুনি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে । সেখানেও পুলিশ আমাদের দেখা করতে দেই নি। পরে রাতে আমাদের জানানো হয় শামীম মারা গেছে। তার সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলেও মনে হয় ভাই আমার বেচে যেত। 

তিনি আরো বলেন, যে ৪০ থেকে ৫০ জন পিটিয়ে হত্যা করলো তাদের আসলে সে কি ক্ষতি করেছে তাও বোধগম্য না। শামীম অনেক খারাপ মানুষ, কিন্তু তারপরেও তো আইন সবার জন্য সমান। তাকে পুলিশে সোপর্দ করতো, র‍্যাবে, আর্মিতে সোপর্দ করতো, আদালতে ১০০ বছর জেল হতো তাও আমরা মেনে নিতাম। যারা মেরেছে তারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে তাদের শাস্তি চাই, সুষ্ঠু বিচার চাই।

শামীম মোল্লার কাজিন মো. জুয়েল বলেন, ‘আমার ভাইকে মারা হয়েছে বিভিন্ন ধাপে ধাপে। প্রথমত প্রান্তিক থেকে নিরাপত্তা অফিস নিয়ে যায়। এরপর সেখানে প্রশাসনিক গাফলতির কারণে দীর্ঘ সময় রাখা হয় এবং ছাত্ররা বিরতি দিয়ে মারধর করতে থাকে। পরে সেখান থেকে থানার ২ নম্বর সেলে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুই জায়গাতেই পরিবারের সদস্যদের দেখা করা থেকে পুলিশ বিরত রাখে। এক পর্যায়ে ভেতর থেকে আমাদের আনঅফিসিয়ালি জানানো হয় শামীম মারা গেছে, কিন্তু দেখা করতে দেয়নি। এমনকি তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। গভীর রাতে মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুটার শামীমকে নিতে আসে আশুলিয়া থানার এস আই অলক কুমার দেসহ কয়েকজন পুলিশ কন্সটেবল। এস আই অলক কুমার দে বলেন, শামীমের নামে চারটি মামলা রয়েছে । হত্যা, মাদক,অস্ত্র মামলা রয়েছে। আমরা তাকে চার মামলায় গ্রেফতার দেখাবো। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, আমি তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। পরে পুলিশ আসলে আমি ঢাল হয়ে শামীমকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিই। সেসময় আনুমানিক ৮টা বাজে । সেসময় শামীম আমাদের ঘাড়ে ভর দিয়ে হেঁটে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসে। পরে রাত ১০টার পর পুলিশ শামীম মোল্লার মৃত্যুর খবর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের দূরত্ব কাছেই। এই দুই ঘণ্টা শামীম কোথায় ছিল সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার।

আশুলিয়া থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রথমে থানায় নেওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। পুলিশ ভ্যানেই সে ঢলে পড়ে। তাছাড়া জাহাঙ্গীরনগর থেকে আশুলিয়ায় ওয়ার্কিং ডে’তে থানায় যেতে ঘণ্টাখানেক লাগে। আমরা হসপিটালে নিয়েছি ৯ টার সময়। তাই ফিজিক্যালি সেটা সম্ভব না। আর পরিবারকে দেখতে না দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপ প্রশাসনকে চাপে ফেলে তাৎক্ষণিক মামলা করতে বাধ্য করেন। এবং অনুমান করে কয়েকজনের লিস্টও দিয়ে আসেন তারা। ফলে নিরপরাধ একজন শিক্ষার্থীর নামে ভুলবশত মামলা দায়ের করেন প্রশাসন। পরে অবশ্য প্রশাসন সংশোধনী পাঠিয়েছে।

এদিকে প্রান্তিকে যারা মারধর করেছে তারা নিরাপদে শামীমকে নিরাপত্তা শাখায় তুলে দেয়। নিরাপত্তা শাখার নিষ্ক্রিয়তার কারণে পরে আবারো পিটুনির শিকার হন শামীম। ঢালাওভাবে সবার নামে হত্যা মামলা দায়ের করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের দাবি, প্রান্তিকের মারধরকারীদের উদ্দেশ্য যদি হত্যা থাকতো তাহলে তো তারা নিরাপত্তা শাখার হাতে তুলে দিতো না। নিরাপত্তা শাখা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতো তাহলে তো শামীম মারা নাও যেতে পারতো।

ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমরা পুলিশ ও নিরাপত্তা শাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।