আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তার বিভাগের নিরব ভূমিকা

বেরোবি
  © সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তাঁর বিভাগের নিরব ভূমিকা দেখে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, শনিবার (১২ অক্টোবর ২০২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যানার নিয়ে আনন্দ উল্লাসেরসহিত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করলেও দেখা মিলেনি আবু সাঈদের বিভাগের শিক্ষকদের (এক জন শিক্ষক ছাড়া)। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানা গুঞ্জন এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ইংরেজি বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজল বলেন, আজ প্রিয় ক্যাম্পাসে'র ১৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দিনটি সবাই উদযাপন করছে প্রতিটি বিভাগ তাদের নিজস্ব ব্যানার নিয়ে র‍্যালি তে অংশগ্রহণ করেন। এখানেই একটু ব্যতিক্রম ইংরেজি বিভাগ। আমাদের নিজস্ব কোনো ব্যানার এ র‍্যালি তে আসিনি। যদিও বিষয়টি হতাশাজনক। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের হাজারো ভালো কাজের মধ্যে উক্ত বিষয় গুলোই বাহ্যিকভাবে চোখে পরে এবং দৃষ্টিকটু লাগে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা আবু সাঈদ হত্যার শুরু থেকেই প্রহসন রচনা করে আসতেছেন। সরকার পতনের আগে তাঁরা বিভাগের সামনে আবু সাঈদের অকাল মৃত্যুর কথা উল্লেখ্য করে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিল। আজ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কলা অনুষদের অধীনে ইংরেজি বিভাগ ব্যানার নিয়ে সামনে থাকার কথা ছিল । কিন্তু সামনে থাকো তো দূরে থাক ইংরেজি বিভাগের পক্ষ থেকে একটা ব্যানার পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি। অন্যান্য সকল বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আনন্দ উল্লাসের সাথে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করলেও আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে কোন কিছু আয়োজন করা হয়নি। 

এদিকে আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা হলের প্রভোস্ট বডিকে দায়ী করে জানিয়েছেন, আমরা খুবই ব্যথিত যে, গত বিশ্ববিদ্যালয় দিবসগুলোতে বেরোবির ৩টি হলে খাবারের ব্যবস্থা করা হতো প্রশাসন থেকে, কিন্তু এবার সেই ব্যবস্থা করা হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। গত যে কোনো প্রোগ্রামে আমরা দেখেছি ক্যাম্পাসের পাশাপাশি আমাদের হলগুলো খুব সুন্দর ভাবে লাইটিং করা হতো কিন্তু এবার আমরা সেটা থেকেও বঞ্চিত। আর এখন হলগুলোতে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে সেই দিক থেকে হলে শিক্ষার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে খুব একটা বেশি বাজেটও লাগতো না। 

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি প্রতিনিধি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ইংরেজি বিভাগের অংশগ্রহণ ছিলো। শুধু ব্যানারটা ছিলো না জন্য এই অবস্থা। র‍্যালিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলো। বিভাগীয় প্রধান ছুটিতে ছিলো। তাই অন্য শিক্ষক নির্দেশনা দিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া জিনিসপত্র কালেক্ট করে র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করা। প্রাথমিকভাবে সম্ভবত ব্যানারও দেওয়ার কথা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, শিক্ষকরা তাই জানতেন। কিন্তু যে জিনিসপত্র কালেক্ট করেছে সে শিক্ষককে জানায়নি যে ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়নি। সকালে র‍্যালিতে এসে এটা নিয়ে যখন যোগাযোগ করা হয় তখন আর কিছু করা সম্ভব হয়নি।

তবে শিক্ষকদের উপস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে শুধু ইমরানা বারী ম্যাম উপস্থিত ছিলেন ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মোঃ ফেরদৌস রহমান বলেন, আমরা তো প্রতিটা বিভাগে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ইংরেজি বিভাগকে প্রোগ্রাম এ দেখা যায়নি। কি কারনে এমনটা হল এটা ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানয়ই ভালো বলতে পারবে। 

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আসিফ আল মতিনকে ফোন দেওয়া হলে ফোনকলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, গতকাল ব্যস্ততার কারণে বিষয়টা দেখা হয়নি। আজকে বিষয়টা দেখতে হবে।