বুটেক্সে হাল্ট প্রাইজের কমিটি গঠন

বুটেক্স
  © টিবিএম

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) হাল্ট প্রাইজ ২০২৪-২৫ সেশনের ক্যাম্পাস রাউন্ডের জন্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেবিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মুনতাসির আল মারুফ। সম্প্রতি প্রকাশিত কমিটির ১৮ জনের কমিটিতে ডেপুটি ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছেন মুনতাহা রহমান রাহা এবং হেড অব অপারেশন হিসেবে রয়েছেন ইমন দাস।

প্রতি বছর হাল্ট প্রাইজে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একটি নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ করেন, যা প্রতিযোগিতার মূল ভিত্তি হিসেবে থাকে। শিক্ষার্থীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের ব্যবসায়িক আইডিয়া উপস্থাপন করে। একাধিক ধাপ অতিক্রম করে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ী দলকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার প্রদান করা হয়, যাতে তারা প্রস্তাবিত আইডিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারে।

বুটেক্সে ক্যাম্পাস ডিরেক্টর মোহাম্মদ মুনতাসির আল মারুফ বলেন, হাল্ট প্রাইজ আমার জন্য একটি আবেগের এবং ভালোবাসার জায়গা। দীর্ঘ এক বছর সহযোগী ডিরেক্টর হিসেবে থাকার পর, প্রথমে আবেদন এবং পরে সিলেকশন প্রসেস পার করে ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হওয়ার যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমাদের বেশ কিছু সেশন ও ওয়ার্কশপ নেয়ার প্ল্যান আছে। যাতে করে এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর যাবতীয় সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে,  এবারের কেস এ যেন তারা ভালো করতে পারে তাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। 

ডেপুটি ক্যাম্পাস ডিরেক্টর মুনতাহা রহমান রাহা বলেন, যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং অন্যান্য সকল বিজনেস কেস কম্পিটিশন থেকে আলাদা, তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে ধারণা দেয়া, ট্রেইনিং সেশন আয়োজন করা এবং সুষ্ঠভাবে ক্যাম্পাস পর্ব সম্পন্ন করা। শুধু তাই নয়, এই প্লাটফর্ম প্রতিযোগীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথও যেন সুগম করে সেই প্রত্যাশায় কাজ করে যাব আমরা।

হেড অব অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমন দাস বলেন, একসঙ্গে আমরা উদ্ভাবনী চিন্তা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু করতে পারবো, যা শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, সমাজের বৃহত্তর কল্যাণেও অবদান রাখবে। আমাদের লক্ষ্য হবে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে প্রতিটি সদস্য তাদের সৃষ্টিশীলতাকে পূর্ণতা দিতে পারে। আমাদের উদ্ভাবন শুধু প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক পরিবর্তনের পথ দেখাবে।

হাল্ট প্রাইজের বিভিন্ন পদে নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে, মোহাম্মদ মুনতাসির আল মারুফ বলেন, এখানে সবার কাজের মূল্যায়ন করে সূক্ষ্মভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর নেয়া হয়। এক্সিকিউটিভ হলো এখানে সবচেয়ে জুনিয়র পদ, তাদেরকেও যেমন আবেদন এবং ভাইভা দিয়ে নেয়া হয়, তেমনি যারা এক্সিকিউটিভ থেকে সহযোগী ডিরেক্টর হয় তাদেরও একই প্রক্রিয়াতে নেয়া হয়। সবার কাজের হিসাব রাখা হয়, কেউ কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কাজের মূল্যায়ন এখানে সবচেয়ে বেশি করা হয়। ৩-৪ মাসের এই স্বল্প সময়ে সবাই যথেষ্ট পরিশ্রম করে। তাদের মধ্যে যে বা যারা সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তারা সিলেকশন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হয়। ডিরেক্টর প্যানেল আমাদের নেয়া শেষ, সহযোগী ডিরেক্টর নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। সামনেই এক্সিকিউটিভ নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যাবে।

কমিটি গঠন নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরছেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ডিপার্টমেন্টপ্রীতি এবং অনুগত শিক্ষার্থীদের পদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ আসে। বিভিন্ন পদে একাধিক ধাপে যাচাই-বাছাই করা হলেও, নির্বাচিত প্রার্থীরা আগেই নির্ধারিত থাকে বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, এখানে কমিটি গঠন নিয়ে যোগ্যতার পরিবর্তে ডিপার্টমেন্টকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ক্যাম্পাস ডিরেক্টর পদের ক্ষেত্রে, প্রাক্তন ক্যাম্পাস ডিরেক্টর এবং ডেপুটি ক্যাম্পাস ডিরেক্টরের পছন্দ এবং প্রভাব সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল ভূমিকা পালন করে, যার ফলে যোগ্য প্রার্থীরা প্রায়শই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ আসে। 

এ বিষয়ে প্রাক্তন ক্যাম্পাস ডিরেক্টর সাফিন সিয়াম পিবর বলেন, ক্যাম্পাস ডিরেক্টর নির্বাচিত হওয়ার পর ডেপুটি ক্যাম্পাস ডিরেক্টর এবং অন্যান্য ডিরেক্টরদের মনোনীত করি, যারা তাদের নিজ নিজ কাজের বিভাগ অনুযায়ী অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টরদের এবং এক্সিকিউটিভদের নিয়োগ দেয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভাইভা এবং কাজের মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিযোগিতার শেষে ক্যাম্পাস ডিরেক্টরকে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়—সে পরবর্তী বছরও দায়িত্ব পালন করতে পারে, অথবা নতুন কাউকে সুপারিশ করতে পারে। হাল্ট প্রাইজ শেষ হওয়ার পর আমি সকল ডিরেক্টরদের সাথে পরামর্শ করে ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হিসেবে মুনতাসিরকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুপারিশ করি এবং আমার দায়িত্ব শেষ হয়। এরপর আরো কয়েকটি ধাপ পার করে মুনতাসির ক্যাম্পাস ডিরেক্টর হয়। প্রতিটি ক্যাম্পাস ডিরেক্টর নিজের মতো করে কমিটি গঠন করে এবং দায়িত্ব ভাগ করে দেয়, যা হাল্ট প্রাইজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে আমি বা আগের কমিটির কারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, আমরা চাইলে সাজেশন দিতে পারি কিন্তু সিদ্ধান্ত বর্তমান ক্যাম্পাস ডিরেক্টরই নিয়ে থাকে।