আড়াই মাস লাপাত্তা বেরোবির শতাধিক হামলাকারী 

বেরোবি
  © ফাইল ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের(বেরোবি )জুলাইয়ের হামলায় জড়িত  শিক্ষকসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থী লাপাত্তা।  ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত আড়াই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক, ৪ কর্মকর্তা, ৪ কর্মচারী এবং  ৮০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় আসতে দেখা যায়নি। আগামী ২৮ অক্টোবর সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আবু সাঈদ হত্যার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়ে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য।

তবে জানা যায়,ছাত্রলীগ কর্মীরা  বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ঘোষণার পর  বেশ কয়েকজন পরীক্ষা দিতে রংপুরে আসেন।কিন্তু তাদের জন্য একাডেমিক ভবনের সামনে জুতার মালা রাখার খবর শুনে ক্যাম্পাসে আসার সাহস পাননি তারা।

১৬ জুলাই ২০২৪, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়   বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ । এসময় পুলিশসহ  ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক, ৪ কর্মকর্তা এবং ৫ কর্মচারীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেদিন তাদের  হামলায় আহত হয় সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আবু সাঈদ নিহতের খবর শুনে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠেন তিনি। তখন আন্দোলনকারীদের পাল্টা ধাওয়াতে হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং গ্যারেজের পেছনের দেয়াল টপকে লেজ গুটিয়ে পালাই।

হামলায় জড়িত ২ শিক্ষক হল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান এবং লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল।  হামলাকারীর তালিকায় চার কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন  রাফিউল হাসান রাসেল, তৌহিদুল জনি,হাফিজুর রহমান তুফান এবং মনিরুজ্জামান পলাশ। ৪ কর্মচারী হল নুরুন্নবী,আশিকুন্নাহার টুকটুকি, সুবহান মোক্তার, আমির হোসেন আমু ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা ৬৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসন বরাবর জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহসভাপতি বিধান বর্মন, মো. রেজওয়ান-উল-আনাম তন্ময়, মো. তানভীর আহমেদ, মো. শাহীন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিব-আল-হাসান, ধনঞ্জয় কুমার দাস টগর, মো. সেজান আহমেদ (আরিফ), মৃত্যুঞ্জয় রায়, সুদীপ্ত সরকার বাধন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেজবাউল সরকার জয়, ইমরান চৌধুরী আকাশ, কফি আনান মান্নান,মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল, আবু সালেহ নাহিদ, মাসুদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, জামাল, এস এম লাবু ইসলাম, সেজান আহমেদ (ওরফে আরিফ),সাব্বির ( ইংরেজি ১২ ব্যাচ),গ্লেসিয়ার রাব্বি (ভূগোল  ৯ম ব্যাচ),মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল,( ইইই -১১ ব্যাচ),সেজান আহমেদ ( ওরফে আরিফ)( এমজিটি ১৩),আবির(জিইএস ১৪),হৃদয় ( ইংলিশ ১৪ ব্যাচ),নাহিদ (পরিসংখ্যান ১২ তম ব্যাচ),মোশারফ (সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ),জামাল (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১৫),এস এম লাবু ইসলাম-(রাষ্ট্রবিজ্ঞান),মেহেদী হাসান মিরাজ (ইতিহাস ১৩ ব্যাচ) ,মেজবাউল সরকার জয় (ইতিহাস ১১ ব্যাচ),ইমরান চৌধুরী আকাশ (ইতিহাস ১১ ব্যাচ),শাহিন(রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১ ব্যাচ) ,মাসুদুল হাসান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১তম) ,শাহিন ইসলাম( রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১),উজ্জ্বল মিয়া ( ইংরেজি -১১) ,হাবিবুর রহমান ( একাউন্টটিং ১২),তৌফিক (ইতিহাস-১২),শাখাওয়াত হোসেন (মার্কেটিং ১২ ব্যাচ), শোয়াইবুল (সাল্লু) (লোক প্রশাসন ১৩ তম ব্যাচ) ,ফিলিপ রায় (বাংলা ১৩ তম ব্যাচ),মোজ্জামেল ( এমআইএস ১৩) ,মাহমুদ (পদার্থ ১২ ব্যাচ) ,সম্রাট ( বাংলা ১৪ ব্যাচ), দেবাশীষ (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ১৩),আব্দুল্লাহ আল রায়হান ( ম্যাথ ১২) ,বায়জিদ মোস্তাফি ( ম্যাথ ১৩) আতিফ আসাব দিপ্র মন্ডল(গণিত ১৪তম ব্যাচ), আব্দুল্লাহ আল নোমান খান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান১১), রিফাত ,রাসেল (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১৩ ব্যাচ),সিয়াম আল নাহিদ ( ইইই ১১) ,ফারহাদ হোসেন এলিট ( রাষ্ট্রবিজ্ঞান),সিয়াম আরাফাত ( লোকপ্রশান ১২ তম ব্যাচ),মোমিনুল (জেন্ডার ৮ম ব্যাচ), তানজিল ( পদার্থ বিজ্ঞান ১৩),অমিত ( লোক প্রশাসন ১৩), আরিফুজ্জামান ইমন (লোক প্রশাসন ৮)কোমল দেব নাথ (লোক প্রশাসন ১৫)এবং গালিব হাসান(মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচ)।

জানা যায়,আবু সাঈদ হত্যা  এবং অন্যান্য আহতের ঘটনায় দুইবার তদন্ত কমিটি গঠন  করলেও প্রথম কমিটি তদন্ত সম্পন্ন না করেই পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তী কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন করতে বললেও মাস পেরোলেও এখনও তা প্রকাশিত হয়নি। 

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ছাত্রত্ব বাতিল ও নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো আবু সাঈদ হত্যার আড়াই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু দুবার তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখনো মিলেনি কোন তদন্ত রিপোর্ট।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, প্রথম তদন্ত কমিটির সময়ে তিনি ছিলেন না। তবে তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছে তথ্য চেয়েছেন ।কিন্তু  তারা অপরাধীদের সঠিকভাবে সনাক্ত করতে সাক্ষাৎকার দিতে বাড়তি সময় চেয়ে নিয়েছিল। তাই সাত কর্ম দিবসের বেশি সময় লেগেছে । এখানে তার কোন গাফিলতি ছিল না। 

তিনি বলেন,গত সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তদন্ত কমিটি  রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। আগামী ২৮ তারিখে সিন্ডিকেট মিটিং আছে। এ সময় সাংবাদিক ডেকে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে।