সাবেক ভিসির বাংলোতে মিললো গুচ্ছের উত্তরপত্র, ছিল এমপির সুপারিশপত্রও

সৌমিত্র শেখর
  © সংগৃৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের ব্যবহৃত বাংলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অব্যবহৃত ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গেছে। 

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,  দুখু মিয়া নামের ওই বাংলো থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির সুপারিশ করে ময়মনসিংহের সদ্য সাবেক দুজন সংসদ সদস্যের (এমপি) ডিও লেটার (আধা সরকারি চাহিদাপত্র) উদ্ধার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুখু মিয়া নামের এই বাংলো থেকেই গুচ্ছ পদ্ধতির ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়ম হতো বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। 

৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখর। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৪ আগস্ট উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন সৌমিত্র। এরপর বাংলোতে থাকা মালামাল নিতে তাঁর স্ত্রী এলে বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন থেকে বাংলোটি ওই অবস্থায়ই রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৭ অক্টোবর বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করে বাংলোটি সিলগালা করে প্রশাসন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা ও অনিয়মের তথ্যানুসন্ধান করার জন্য গত রোববার একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২১ অক্টোবর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

দুদকের তথ্যানুযায়ী, অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি/সম্পদের তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। 

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলোর দোতলায় একটি কক্ষ সিলগালা। এটি উপাচার্যের শয়নকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ভেতরে দুটি আলমারিও সিলগালা। আলমারির তালা খুলে ভেতরে ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর শিট পাওয়া যায়। সেখানে ছাত্র ভর্তির সুপারিশ করে উপাচার্য বরাবর ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজীম উদ্দিন আহমেদের দেওয়া ডিও লেটার ছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ডিও দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি ডিও দিয়েছেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি চিঠি দেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন মাদানী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সুপারিশ করা পৃথক দুটি ভর্তির আবেদনপত্রও দেখা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনে পাওয়া নথিপত্রের একটি জব্দ তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে— ওএমআর শিট, দুটি খাম, জীবনবৃত্তান্ত, ভর্তি পরীক্ষার ফাইল, নিয়োগ খাতা তিনটি, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ খাতা, তদন্ত প্রতিবেদন, ড্রাইভার নিয়োগ, জিএসটি প্রবেশপত্র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ, ফোকলোর ও সমাজকর্ম নিয়োগ খাতা, মার্কেটিং বিভাগের অফিস সহায়ক নিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ খাতা, বাস হেলপার নিয়োগ খাতা, প্রকল্প বিল ভাউচার, ট্রেজারার নিয়োগ ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।