নবীনদের পদচারণায় মুখরিত পবিপ্রবি ক্যাম্পাস 

পবিপ্রবি
  © টিবিএম

দক্ষিণ বঙ্গের উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় এর অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে অতিবাহিত করেছে প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর। এরই সঙ্গে যোগ হলো শিক্ষার্থীদের আরও একটি ব্যাচ। নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গান আড্ডা ও বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয়ে সবাই যেন ব্যস্ত। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি দিনই সত্যিই অনেক আনন্দের। 

চান্স পাওয়ার পর প্রত্যেকেই ক্যাম্পাস নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন, নানা পরিকল্পনা। প্রস্তুতি নিতে থাকে ক্যাম্পাসের দিনগুলো কীভাবে কাটাবে এবং কী করবে। প্রবীণরাও প্রস্তুতি নিতে থাকে কীভাবে নবীনদের বরণ করে নেয়া যায়। প্রস্তুতি শেষে ওরিয়েন্টেশনের দিনেই সেটি প্রকাশ পায়। সবাই ভেসে যায় আনন্দের জোয়ারে। নানা আয়োজন আর আনন্দঘন পরিবেশে গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ভর্তিকৃত স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন ক্যাম্পাস মেতেছিল উৎসবের আমেজে। নবীন ছাত্রছাত্রীরা সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। অনেক নবীনের সঙ্গে আবার তাদের অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের প্রবীণরাও এসেছেন সাজগোজ করে নানা আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। প্রবীণ ছাত্রীদের কেউ কেউ শাড়ি পরে ও ছেলেরা এসেছে পাঞ্জাবি অথবা শার্ট-কোর্ট-টাই পরে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের শাখা প্রধান মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স জানান, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিবিএ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো:  সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার। তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হলের প্রোভোস্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য রেজিস্ট্রার প্রফসর ড. মোঃ মামুন অর রশিদ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, প্রশাসনিক কাঠামো, প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিধিবিধান ও নিয়মকানুন তুলে ধরা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী নবীনদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতার যুগে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নতুন ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে সবাইকে ক্যাম্পাস গড়ার কাজেও অংশীদার হতে হবে। সবার সহযোগিতা, আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশের মাধ্যমেই এ বিশ্ববিদ্যালয় একদিন দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে দেবে। শিক্ষার্থীরা তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে যেন তাদেরও ছাপিয়ে যায় এবং বিশ্বের দরবারে যেন নিজেদের তুলে ধরতে পারে আরও যোগ্য হিসেবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান তার হাস্যোজ্জ্বল বক্তব্যের মাধমে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের আহ্বান করেন তাদের সন্তানদের যেন নিয়মিত খোজ খবর নেন । তিনি বলেন, পবিপ্রবির শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটছে। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের জন্য শীর্ষে রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আব্দুল লতিফ বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে আশা করব ছাত্রছাত্রীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্ত রাখেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ জিল্লুর রহমান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রত্যাশা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মকানুন রীতিনীতি যথাযথভাবে পাগল করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর আবুল বাশার খান তার বক্তব্যে র‍্যাগিং ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। 

অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজনকে তাদের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে একাডেমিক আইডি কার্ড ও প্রোফাইল প্রদান করা হয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।

নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন টিএসসি কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে আসে তখনই আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সবার হাতে হাতে ফুল, সবাই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। অনেকে ব্যস্ত গ্রুপ সেলফি তোলায়। অনেকে আবার বসে পড়েছে আনন্দ আড্ডায়। ক্যাম্পাসে পুরোটা দিন অতিবাহিত হয়েছে এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশে। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে নতুন জীবনের শুরু! সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন অনুষদের নবীন শিক্ষার্থী মুশফিক, ইমু, জিশান, জিহাদ, মাহফুজ, কৌশিক, সায়দা, প্রিথা ও সায়মা বলেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। ক্যাম্পাসের প্রথম দিনে সিনিয়রদের সঙ্গে গান-আড্ডায়  মেতেছিলাম। প্রথম দিনেই অনেকটা আপন করে নিয়েছে এখানকার বড় ভাইয়া ও আপুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি স্যার এর কঠোর অবস্থানের কারণে আমরা হলে কিংবা ক্যাম্পাসের কোথাও র্যাগিং এর শিকার হইনি। এ রকম আনন্দঘন পরিবেশ এর আগে কোথাও আমরা পাইনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদের নবীন শিক্ষার্থী আতিক, আতাউল ও আরহাম এনএফএস অনুষদের হাসিব, সিএসইর মামুন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সায়মা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পছন্দের বিভাগে ভর্তি হতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রথম দিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমরা বড় হয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করতে চাই। তারা বলেন, আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে সত্যিই অনেক আনন্দিত। এই ঐতিয্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।