সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে ভেরা আঃ রহিমের
- রোহান চিশতী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ PM , আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ PM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদল নেতা বনে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে "সাংবাদিকরা নিউজ করে কি করতে পারে আমি দেখে নিবো, আর আমি কি করবো তোমরা দেখবে" বলে হুমকি দেন এই ছাত্রদল নেতা।
শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনের পর থেকেই রাত ১২টার পর থেকে হলের বিভিন্ন কক্ষে থাকা ছাত্রদের ব্যক্তিগত তথ্য নিতে আসে এই আবদুর রহিম। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামতে বলা ও নিজের অনুসারীদের হলে উঠানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হাসান আকাশ বলেন, আমার রুমে হঠাৎ করে ৮-১০ জন কোন অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পরে। পরের দিন আমার সেমিস্টার পরীক্ষা থাকায় আমি তাদের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়ে পড়তে থাকি। তারপর আমার বিভিন্ন তথ্যের জন্য জেরা করা শুরু করে। পরে আমার ম্যানার খারাপ এইসব বলে তাদের খাতায় নাম বিভাগ লিখে পাশে স্টার চিহ্ন বসিয়ে দেয়। তাদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থীর পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তারা ছাত্রদল নেতা।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ বলেন, ছাত্রদলের রহিম ভাই ও ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী মোস্তাকিমসহ ৪/৫ জন আমাদের রুমে এসে নাম লিস্ট করে ও রুমের আরেক সিটের ফজলুল ভাই তখন ক্যাম্পাসে না থাকায় তাকেও কল করে। ফজলুল ভাইয়ের মাস্টার্সের একটা ইমপ্রুভ বাকি ছিলো তাই তিনি সিট ক্যান্সেল করে নি। কিন্তু জোরপূর্বক সেই সিটে রহিম ভাই তার জুনিয়রকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডাও হয়।
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব জানান, আমার রুমে রহিম ভাই এসে এখানে ছাত্রলীগের সিট ছিলো বলে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। ওই সিটে তিনি ছাত্রদলের ছেলেদের নাকি উঠাবেন।
যদিও এসব বিষয়ে হল প্রশাসনের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে সিনিয়র হাউজ টিউটর আব্দুল মুয়ীদ। তিনি বলেন, হলে থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা করার কোন সাহায্য হল প্রশাসন ছাত্রদলের কাছে চায় নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাহলে এমন রাজনৈতিক পরিচয়ে তথ্য চাওয়াটা সঠিক না। হলের ২য় তালার এক রুমে গিয়ে ছাত্রদলের পরিচয়ে কোন কোন সিট ফাকা আছে সেখানে লোক তুলবে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। দ্রুতই হলের সিট বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ জন্য আমরা কাজ করছি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হলের সিট বরাদ্দের বিষয়ে হল প্রশাসন কাজ করছে। আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকেই প্রতি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ এবং সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আলাদাভাবে হলের রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি অনুচিত। হল প্রশাসন এ ধরনের দায়িত্ব কাউকে দেয়নি।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধানের অনুসারী আব্দুর রহিমের পদ ছিলো ছাত্রলীগেও। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাব্বির-আপেল কমিটিতে কলা অনুষদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রহিম। ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তনের দল পাল্টে যোগ দেন ছাত্রদলে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদি করে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান রহিম।
এসব বিষয়ে জানতে আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তিনি বলেন, হ্যা, আমি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতাকর্মী কেউ হলে আছে কি না, সেটা দেখার জন্য ছাত্রদল সেখানে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থী কাউকে ডিস্টার্ব বা বের করে দেওয়া হয়নি। হলে ছাত্রলীগের পোস্টেড কেউ আছে কি না, এটা জিজ্ঞেস করা তো দোষের কিছু না৷
কথোপকথনের এক পর্যায়ে ছাত্রদল কেন শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে রহিম বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করে কি করতে পারে আমি দেখে নিবো, আর আমি কি করবো তোমরা দেখবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, হলে কে থাকবে এটা নির্ধারণ করবে হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কেউ যদি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।