আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস ও কিছু কথা 

দিবস
  © ফাইল ফটো

আজ ১০ নভেম্বর। দিনটিকে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস বা International Accounting Day or Day for Accountant বলা হয়। 

মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতো অ্যাকাউন্টিং বা হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাসও বেশ পুরনো। পরে সময় এবং চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হিসাব সংরক্ষণের পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয় এবং তারই ফলে একটা সময় হিসারেব বইতে অঙ্কের মাধ্যমে লেখা শুরু হয়। 

১৪৯৪ সালের এই দিনে ইতালির গণিতবিদ লুকা বার্টোলোমিও ডি প্যাসিওলি ভেনিসে সুম্মা ডি এরিথমেটিকা, জিওমেটিয়া প্রপোরসনি অ্যাট প্রপোরশনালিটা’ শীর্ষক পুস্তিকাপ্রকাশ করেন। এটিই প্রথম বই, যাতে গাণিতিক জ্ঞানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। এতে ডাবল এন্ট্রি বুককিপিং বা হিসাবরক্ষণ ও বাণিজ্যিক হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেন।

শত শত বছর ধরে ডাবল এন্ট্রি সিস্টেমের ওপর কাজ চলছিল, তবে লুকা প্যাসিওলির এই ২৭ পৃষ্ঠার পুস্তিকাটি ‘দ্য ফাদার অব মডার্ন অ্যাকাউন্টিং’ খেতাব অর্জন করেছে। তিনি তখন যেসব পদ্ধতি প্রকাশ করেন তার বেশিরভাগই আজ হিসাবচক্রে অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি জার্নাল ও লেজার ব্যবহার করে দেখিয়েছেন এবং সর্তক করে দিয়েছেন যে, ‘একজন হিসাববিদের রাতে ঘুমাতে যাওয়া উচিত নয়, যতক্ষণ না ডেবিট-ক্রেডিটগুলো সমান হয়।’ এছাড়া তিনি আয় বিবরণী প্রস্তুত করার জন্য আয় ও ব্যয়সমূহ এবং উদ্বৃত্তপত্র বা ব্যালান্স শিট প্রস্তুত করার জন্য সম্পত্তি, দায় ও মূলধনের বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বছর শেষের সমাপ্তি এন্ট্রিসহ ট্রায়াল ব্যালেন্স ও ব্যাখ্যা বা প্রমাণের সুষম ব্যবহার দেখিয়েছেন। এছাড়া তার সমীক্ষা অ্যাকাউন্টিং নীতিমালা থেকে কস্ট অ্যাকাউন্টিং পর্যন্ত বিস্তৃত। এ কারণেই লুকা প্যাসিওলিকে আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

হিসাববিজ্ঞান দিবস, হিসাববিদ দিবস বা হিসাববিজ্ঞান শিক্ষা দিবস যে নামেই পালন করা হোক, মূলত লুকা প্যাসিওলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং হিসাববিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব, ব্যাপ্তি ও প্রসারের জন্যই সারা বিশ্বে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।

যদিও বাংলাদেশে তেমন ঘটা করে এদিবসটি পালন করা হয়না।যার জন্য এদিবসটি সম্পর্কে তেমন কেও অবগত না। হিসাববিজ্ঞান পেশাকে একটি গতিশীল পেশা বলা হয়। কারণ অন্যান্য পেশার সঙ্গে হিসাব পেশাজীবীদের মূল পার্থক্য হচ্ছে অন্য পেশাজীবীদের তাদের নিজ নিজ পেশার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হয়। কিন্তু হিসাব পেশাজীবীদের হিসাববিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে গণিত, তথ্য ও প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, বাজারজাতকরণ, আইন, নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়েও প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখতে হয়। ফলে হিসাববিদরা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো পলিসি নির্ধারণী বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে। তাছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং বডিগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড ও পলিসি তৈরি করে যা হিসাব পেশাজীবীদের আপ-টু-ডেট রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া হিসাববিদেরা যেহেতু প্রতিষ্ঠানের অর্থের মূল রক্ষক হিসেবে কাজ করে, ফলে তাদের তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। হিসাববিদদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কোনো অবস্থাতেই তারা তাদের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় না।

পেশাদার হিসাববিদদের কাজে উৎসাহ জোগাতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ কাজের গুরুত্ব বোঝাতে এবং এ পেশায় তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে এ ব্যক্তিগত, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে হিসাববিদদের মহান অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছর বিশ্ব হিসাববিজ্ঞান বা হিসাব পেশাজীবী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা উচিত।


লেখকঃ শিক্ষার্থী,ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ।