ঢাবির ভর্তিতে পোষ্য ও খেলোয়াড় কোটা বাতিল চেয়ে রিট 

ঢাবি
  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য ও খোলায়াড় কোটা বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।‌ 

এর আগে ৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ই-মেইলে আইনী নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, একজন অভিভাবক, একজন সাধারণ নাগরিক ও সুপ্রিম কোর্টের ৭ জন আইনজীবীর পক্ষে আজ রিট দায়ের করা হয়। 

রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্টারকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটকারীররা হলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ল এন্ড ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, এডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, এডভোকেট খায়রুল বাশার,  এডভোকেট লোকমান হাকিম,  একজন ছাত্রের অভিভাবক মোঃ হোসেন আলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম। 

নোটিশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে (ক) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (খ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ১ শতাংশ এবং (গ) শারীরীক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করতে বলা হয়েছিল। নোটিশ গ্রহীতারা ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্টে রিটসহ বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। 

নোটিশে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ সকল গণতান্ত্রিক ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।

নোটিশে বলা হয়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে, এবং অন্য কোনো মানদণ্ডে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক, কোনো বৈধ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই।  

দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এই রায় প্রয়োগ করতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনি কোটা বাতিল করা হলেও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বহাল রেখেছেন কতৃপক্ষ। 

নোটিশে আরও বলা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (০৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী বা শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের উন্নতির জন্য বিশেষ বিধান করা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েরা সেই মানদণ্ড পূরণ না করা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,  কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য  ভর্তি প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড/পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করা বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী ও অযৌক্তিক, যার সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই।

নোটিশে আরও বলা হয় খেলোয়াড়দের কোটায় ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া খেলোয়াড়দের কোটা সংবিধানে সংজ্ঞায়িত পশ্চাদপদ বিভাগের অধীনে পড়ে না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশেষ কোটাও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। এছাড়া খেলোয়াড় কোটায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি কোটা  বাতিল  করা হলেও  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য পোষ্য কোটা সংরক্ষণ রাখাটা  সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর খোলোয়াড় কোটায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযােগ রয়েছে। এজন্য এসব কোটা বাতিলের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ  যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় আজ  হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট  শাখায় রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটটি দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।