ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ ও আঞ্চলিক ট্যাগিংয়ের প্রতিবাদ ‘তিতাস’র

ঢাবি
  © টিবিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে গণমাধ্যমে ‘অতিরঞ্জিত’ সংবাদ প্রচার ও ‘ট্যাগিং’ এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ-তিতাস’।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেনকে দেয়া এক স্মারকলিপিতে এ প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি।

স্মারকলিপিতে তিতাসের সভাপতি লিমন হাসান ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান রবিন বলেন, 'ক্লিকবেইট' শিরোনামের টার্গেটে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীনভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়ে সংবাদের ভাষা নির্মিত হচ্ছে না। আমাদের বার্তাকক্ষ কতটুকু যোগ্যতার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খবর পৌঁছে দিচ্ছে পাঠকের এবং আমাদের কাছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।

‘নৃবিজ্ঞানের ভাষায় বললে এই এথনোসেন্ট্রিজমের যে চর্চা আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ করছে তিতাস। এই অপরকরণ সংস্কৃতির নিন্দা জানাই। একটি জেলার জনগোষ্ঠীকে 'নির্দিষ্ট পরিচয়ে ট্যাগ' করার প্রবণতা দেশের সামগ্রিক অখণ্ডতার পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মনে করে তিতাস,’ বলেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নানা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের কথা উল্লেখ করে তিতাস নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষা ও সংস্কৃতি'র রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবদান অপরিসীম। বার ভূঁইয়াদের নেতা ঈশা খাঁ এবং স্বদেশী আন্দোলনের নেতা উল্লাসকর দত্তের জন্মস্থান এই জেলায়। এই জেলার আরেক কৃতি সন্তান রাজনীতিবিদ শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যিনি প্রথম পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষা চালুর দাবি উপস্থাপন করেন। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক অলি আহাদের জন্মস্থানও এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যিনি ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ডাকসুর সাবেক জিএস এবং স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আবদুল কুদ্দুস মাখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক কৃতি সন্তান। বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দীন খাঁ যিনি বিশ্বে সুর সম্রাট নামে পরিচিত তারও জন্মস্থান এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সোনালী কাবিন খ্যাত কবি আল-মাহমুদের জন্মস্থান এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন অনেক ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত এবং বিশ্বের কাছে নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে দেশে সবসময় সমাদৃত এই জেলাকে নিয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ এবং আঞ্চলিক ট্যাগিং দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে।

তারা বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সহিংসতা নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৭১ সালে একটি রক্ত প্লাবিত সহিংস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় এই জাতি, যার রাজনৈতিক ইতিহাসে 'সহিংসতা' নামক প্রপঞ্চটি নানা মাত্রায় ঘুরে ফিরে প্রভাব রেখেছে। মাত্রা ও প্রভাবগত কারণে সামাজিক সহিংসতা বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত অথচ কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংঘর্ষ সংবাদমাধ্যম গুলোতে হাইলাইট হচ্ছে বলে আমরা পরিলক্ষিত করছি।