নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষে অভিযুক্তদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করলো দর্শন বিভাগ
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ PM , আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ PM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়রের সাথে বসাকে কেন্দ্র করে দর্শন বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে হামলায় অভিযুক্তদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে দর্শন বিভাগ। এছাড়াও ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) এ ঘটনায় দর্শন বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় হামলায় অভিযুক্তদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইরফান আজিজকে সভাপতি এবং প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটিতে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মো. আশরাফুল আলম তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। কমিটিকে পত্র ইস্যুর তারিখ হতে পরবর্তী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের (১৮ তম ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে বসাকে কেন্দ্র করে বিবাদে জড়ায় দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ (১৬ তম ব্যাচ) ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা (১৭ তম ব্যাচ)। এরপর ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঘটনাটি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জানালে তারা সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা মীমাংসা করতে না পারায় গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়। তবে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মীমাংসার রায় পছন্দ না হওয়ায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) পুনরায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
এসময় শিক্ষকদের সামনেই সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি শান্ত করতে বিষয়টি অমীমাংসিত রেখেই বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান মো. তারিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বাইরে যেতে বলেন। পরে বিভাগীয় প্রধান সিনিয়র শিক্ষার্থীদের আবারও বিভাগে আসতে বললে পথিমধ্যে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ১৬ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে নারী শিক্ষার্থীসহ একাধিক আহতের ঘটনা ঘটে।
বিভাগটির ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবির বলেন, ১৬ ও ১৭ ব্যাচের মনোমালিন্যের বিষয়টি সমাধানের জন্য পুনরায় বিভাগে বসা হলে শিক্ষকদের সামনেই ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আবারও সিনিয়রদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এরপর আমরা বের হয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর বিভাগীয় প্রধান আমাদের বিভাগে আসতে বললে ১ নং গেট সংলগ্ন রাস্তায় ১৬ ব্যাচের রাসেল, রোহান, আসিফ, সাজিদ, আবিদ এবং ১৭ ব্যাচের মোস্তাফিজ, নীরব, ফাহাদ, লাবিব এবং নিশাতসহ বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে।
১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইবনাত বলেন, ‘আমরা ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ১৬ ব্যাচের সিনিয়ররা আমাদের মারার জন্য ঔদ্ধত্য হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ১৬ ব্যাচের অধিকাংশ স্থানীয় হওয়ায় তারা ক্ষমতার জোর দেখিয়ে বিভিন্ন সময় এলাকায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও সুযোগ পেলেই ছাত্রলীগ-শিবিরের ট্যাগ দিয়ে মারধরের হুমকিও দেয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, দর্শন বিভাগের ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ, শান্ত, প্রান্তসহ আরো অনেকেই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে এবং মারধরের হুমকি দেয়। হলের রুম থেকেও বের করে দেয়। ৫ আগস্টের পর তারা আবারো সক্রিয় হয়ে এখন তারা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে মতবিরোধ পোষণ করতে থাকে। আমাদের সব ব্যাচের মতবিনিময় ছিলো, সেখানেও তারা আমাদের আক্রমণ করতে আসে। এরপর আমরা ১নং গেটের দিকে যাওয়ার সময় আমাদের ওপরও হামলা করে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দর্শন বিভাগের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণের বেশকিছু আলামত বিভাগের নিকট এসেছে। বিভাগ মনে করছে এটি একটি নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগপত্র প্রক্টর অফিসে জমা দেয়া হয়েছে মর্মে বিভাগ অবগত। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ যেকোনো অপ্রীতিকর/অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১৬তম ব্যাচ এবং হামলায় অভিযুক্ত বিভাগের অন্যান্যদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভাগটির সিনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকেও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে অতিদ্রুত অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।