গণঅভ্যুত্থান নিয়ে শিবিরের "ফ্রেমে বন্দি ৩৬ জুলাই"

ঢাবি
  © সংগৃহীত

'২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আলোকচিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির এক অভিনব আয়োজন করেছে। ‘ফ্রেমে বন্দি ৩৬ জুলাই : অভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী প্রথমদিনেই দর্শক মহলে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। জাতীয় চেতনায় জুলাইকে চিরভাস্বর রাখার দায়িত্ববোধ থেকে এমন আয়োজন করে সংগঠনটি।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীটি আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আজ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে চব্বিশের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য প্রদান করেন শহীদ আদিলের পিতা আবুল কালাম, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হেলাল উদ্দিন এবং আন্দোলন চলাকালীন গ্রেফতার হওয়া আলোচিত হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ।

দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। এসময় মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, শান্তদের আত্মত্যাগে সূচনা হয়েছিল চব্বিশের ফ্যাসিবাদকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করার সংগ্রামের। চব্বিশের আন্দোলন ছিল সকল দলমত নির্বিশেষে ছাত্রজনতার এক অভূতপূর্ব বিপ্লব, যেখানে কোনো একক দলের নয়, বরং পুরো জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিজয় অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, একটি অপশক্তি সেই বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লবে পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত। শহীদদের সেই ত্যাগ এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের আত্মত্যাগকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে যেন অনেকেরই দ্বিধা রয়েছে। যে আন্দোলনে মা তার সন্তানকে শহীদ করার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেই চেতনা আজ অনেকেই ধারণ করতে পারছে না। বিপ্লব-উত্তর এই বাস্তবতায় সেই আত্মত্যাগের স্পিরিটকে ধরে রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শিবির সভাপতি আরও বলেন, ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত আমাদের এই উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলায়, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা এবং দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ব্রিটিশসহ একটি আদিপত্যবাদী শক্তি। তারা এখনও আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের নীলনকশা করেই যাচ্ছে। 

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে মিডিয়ার স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ছিল রুদ্ধ। মত প্রকাশের সুযোগ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। যখন আমরা, বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবির এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, তখনই জুলুম, নির্যাতন এবং নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছি। তিনি ছত্রিশে জুলাইয়ের স্পিরিট ধরে রাখার জন্য সকল মহলে উদাত্ত আহ্বান জানান।

এদিকে ছাত্রশিবিরের এমন আয়োজনের ব্যাপক প্রশংসা করছেন নেটিজেনরা। রাজিব মন্ডল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, শিবিরের আয়োজন এজন্য যাচ্ছি না বা যাওয়ার মোটিভেশান পাচ্ছি না -এমন চিন্তা যাদের মাথায় ঘুরতেছে তাদেরকে বলব একবার অন্তত মনের সংকীর্ণতা দূর করে আজকে জাতীয় জাদুঘরে (শাহাবাগে) যান (অন্তত সমালোচনা করার জন্য হলেও যান)। দেখেন তারা কি আয়োজনটাই না করেছে! হলফ করে বলা যায় দেশে গত কয়েকমাসে জুলাই আন্দোলন নিয়ে এমন আয়োজন কেউ করতে পারে নাই (এমনকি কোনো ইস্যু নিয়েই এমন আয়োজন দেশে কখনই কেউ করতে পারে নাই)। এতো বড় কলেবরে, সিমসাম, গোছালো, পরিকল্পিত সাথে লাগজারিয়াস এবং গ্লোরিয়াস। আজকে যারা যাইতে পারতেছেন না, অন্তত কালকে যাইয়েন, অন্ততঃ ২০ মিনিটের জন্য হলেও। গিয়ে যা পাবেন তার প্রথম হলো একটা ইউনিকনেস, একাত্মতাবোধ, জুলাইয়ের প্রকৃত স্পিরিট, ইনক্লুসিভনেস আর চমক। জুলাই আন্দোলনের রঙয়ে রঙিন হবে আপনার মন ও প্রাণ।