৫৪তম বিজয় দিবস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

কুবি
  © সংগৃহীত

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন মহান বিজয় দিবস। স্মৃতিবিজড়িত এ দিনে বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে প্রথমবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাদ পেয়েছিল। এ বিজয় একদিনে আসেনি। বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে এবং এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয় আসে। পৃথিবীর বুকে স্থান করে নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে। 

বিজয়ের ৫৪ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বর এলেই বিভিন্ন আয়োজনে দেশব্যাপী মানুষের মুখে মুখে বিজয়ের ধ্বনি শোনা যায়। বিজয়ের মাস শুধু উদযাপনের জন্য নয় বরং দেশকে নিয়ে নতুন করে ভাবনার ও জানারও মাস। এই বিজয়ের ৫৪তম বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন সুদীপ্ত সাহা।

স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশে বিজয় দিবস যোগ করেছে অনন্য মাত্রা 

ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে ও আপামর বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে অর্জিত ২০২৪ সালের স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ ৫৪তম বিজয় দিবসে যোগ করেছে এক অনন্য মাত্রা। ১৯৭১ সালে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি ও গোত্রের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালিরা যেমন মৃত্যুকে তুচ্ছ করে পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। তেমনি ২০২৪ সালেও দেশপ্রেম ও গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদে মানুষ একত্রিত হয়। রাজপথে তাদের সাহসী পদচারণায় প্রমাণিত হয়েছে, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য বাঙালিরা কখনো পিছপা হয় না। এই দুটি বিজয়ের সম্মিলিত চেতনায় আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখবে। আমাদের পরিচয় হবে ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোত্রের ঊর্ধ্বে একজন বাংলাদেশি হিসেবে। গণতন্ত্র হবে আমাদের মূলমন্ত্র এবং দেশপ্রেম হবে সর্বোচ্চ চেতনা। ভিন্ন বিশ্বাস ও মতাদর্শের সহাবস্থানের মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলব একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক দেশ।

মাহমুদুল হাসান
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাবি 

আত্মত্যাগের মূল্য বুঝে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা

বিজয়ের ৫৩ বছর পরে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অনুভব করি এই বিজয় শুধু স্বাধীনতা বা ভূখণ্ডের বিষয় নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস, সাহস, আর ঐক্যের প্রতীক। ১৯৭১ সালে যখন নারী পুরুষ একযোগে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা জানত না তারা ফিরবে কি না। কিন্তু তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তাদের সংগ্রাম একদিন সফল হবে এবং আজ আমরা সেই সফলতার ফল ভোগ করছি। শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো এই সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মূল্য বুঝে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা। আমরা শুধু পড়াশোনা করেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারি না, আমাদেরও দেশপ্রেম, নৈতিকতা এবং জাতীয়তা অনুভব করতে হবে। এই দেশ, এই স্বাধীনতা আমাদের একাত্মতা ও সহমর্মিতার শক্তিতে টিকে থাকবে। আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব, দেশের উন্নয়ন, শান্তি এবং অগ্রগতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও গর্বের সাথে বলতে পারে, ‘‘আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মেছি এবং তা রক্ষা করতে প্রস্তুত আছি।"

জান্নাতুল ফেরদৌস
মার্কেটিং বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে দেশ অনন্য উচ্চতায় যাবে

স্বাধীনতার ৫৪তম বছরে আমাদের শুধু মৌলিক অধিকার নিয়ে আশা-প্রত্যাশার জায়গাগুলোতে ঘাটতির কমতি নেই। আমরা এখনো মৌলিক অধিকারই সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করতে পারছি না। এখনো শিশু শ্রম, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ, অনিয়ম, বেকারত্ব চরমভাবে সমাজে ব্যাধি হিসাবে কাজ করছে। এগুলোর প্রতি সরকার ও কতৃপক্ষ জোরালো দীর্ঘস্থায়ী কাজ করবে প্রত্যাশা রাখি। স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, গর্ব। দেশ থেকে চাওয়া পাওয়ার হিসাব বাদ দিয়ে আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে দেশকে কতটুকু দিতে পারছি সেই হিসাবই মূখ্য হওয়া উচিত। আমরা প্রত্যেকে সচেতন, সভ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করলে আশা করি দেশ খুব তাড়াতাড়ি আমাদের অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যারা দেশ গড়ার দায়িত্বে আছেন, তারা যদি তাদের দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করে তাহলে খুব শীঘ্রই আমরা নতুন এক বাংলাদেশ দেখতে পাবো বলে আশা রাখি। স্বাধীনতার ৫৪তম বছরে এসে এটাই চাওয়া এত আন্দোলন, অভ্যুত্থান, সংগ্রাম বৃথা না যাক। সবাই সহযোগিতায় নতুন বাংলাদেশ পাওয়াই একটা চাওয়া।

সাঈদ আহমেদ রিফাত
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতা শব্দটির পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ হয়েছে 

স্বাধীনতার ৫৪ বছর যেন স্বাধীনতা শব্দটির পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। যেখানে নিশ্চিত হয়েছে চলাফেরার স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে জনগন তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারছে। দেশের এবং দশের মূলমন্ত্র হিসেবে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের দিকে অনেকটা অগ্রসর হচ্ছে। দুর্নীতির বাঁধ ভেঙে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ন্যায়পরায়ণ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ স্বপ্নের বাংলাদেশের দিকে। স্বৈরাচার পতনের পূর্বে ভাবতাম, যদি বিচারক হই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমি কি সমর্থ হব। ছাত্র জনতার এই বিরোচিত বিজয়ের পরে এখন নিজের মনে পুষে থাকা বিপ্লবী সাহস বলে ওঠে। হ্যাঁ এখন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আমি সমর্থ হব।

রিছাল
আইন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়