প্রতিষ্ঠার দশ বছরেও কোনো স্থায়ী ভবন নেই রাবিপ্রবিতে
- রাবিপ্রবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ PM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ PM
প্রতিষ্ঠার দশ বছর পার করলেও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) এখনো কোন স্থায়ী ভবন নির্মান করা হয়নি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) আইন’ পাস করে তৎকালীন সরকার। নানা প্রতিকূলতা পার করে ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে দীর্ঘ ১০ বছর পার হলেও নিশ্চিত করা যায়নি শিক্ষার পরিবেশ। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়লেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।
নানা সংকটে ভোগা বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী ভবনে। নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা। বর্তমানে পাঠদানসহ বিভিন্ন কাজ চলছে কেবল ৩০ জন শিক্ষক দিয়ে। প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোনো কাজই দৃশ্যমান হয়নি।
চলতি বছরের (২০২৪) জুন মাসে সয়েল টেস্ট কাজের পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপাচার্য। পরবর্তীতে শিক্ষকদের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের পরে কার্যত কোন উন্নয়নের অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বিহীন এ বছর পার করলো রাবিপ্রবি।
স্থায়ী ভবন না থাকায় ক্লাস রুম সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়াও লাইব্রেরির জায়গা সংকট, ল্যাব রুমের ঘাটতি, অডিটরিয়াম, প্রার্থনার আলাদা ব্যবস্থা না থাকা সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাবিপ্রবি। বর্তমানে প্রশাসন বিহীন রাবিপ্রবির কার্যক্রমে নেই তেমন কোন দায়বদ্ধতা। তাই ২০২৪ সালের শেষেরদিকে স্থায়ী ভবনের নির্মাণের কাজ শুরুর কথা থাকলেও তা কেবল অতীত। এদিকে স্থায়ী অবকাঠামো বিহীন রবিপ্রবিতে দিন দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।দুর্দশার চিত্র এমন যে এক ব্যাচে ক্লাস করলে অপর ব্যাচকে বাহিরে অপেক্ষা করতে হয়।
সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী এম, আকতারুজ্জাম অপু বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে আমরা ২ জন ভিসি পেয়েছি। কিন্তু এখনও শিক্ষক সংকট, শ্রেণীকক্ষ সংকট, যানবাহন সংকটসহ আরো অনেক সংকট রয়ে গেছে। এসব সমস্যার সাথে সেশনজট তো আছেই। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কোনো ব্যবস্থা নাই।কম্পিউটার ল্যাব রুম আছে একটা তাও সকল বিভাগের জন্য, যার বেশিরভাগ কম্পিউটারই নষ্ট। সিএসই বিভাগের জন্য কোনো আলাদা কম্পিউটার ল্যাব রুম নেই।
তিনি আরো বলেন, ল্যাব সংকটের কারণে প্র্যাকটিকাল জ্ঞানে ঘাটতি নিয়েই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার কবে সঠিক ব্যবস্থা নিবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই অবহেলিত কেন! কবে এই অবহেলা থেকে মুক্তি পাবে রাবিপ্রবি তা আমাদের সকল শিক্ষার্থীর প্রশ্ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন," আমরা শুধু উন্নয়নের আশ্বাস পাই। কিন্তু কোন ধরনের উন্নয়ন দেখতে পাই না। নতুন বছরে আমাদের একটাই দাবি সংকট নিরসনে যেন প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সমস্যাগুলো লাঘব করে।"
এদিকে, স্বল্প জনবল ও শিক্ষক সংকটে নানা সমস্যায় পড়তে হয় রাবিপ্রবিকে। শিক্ষক সংকট থাকায় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অল্প ও বৃহৎ পরিসরে সেশন জট লেগেই আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো পায়নি কোন অধ্যাপক।এমনকি ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগে নেই কোনো শিক্ষক ও ল্যাব। শিক্ষক ও ল্যাব ছাড়াই চলছে এই বিভাগে পড়াশোনা। কোনো শিক্ষক না থাকায় বর্তমানে এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের লেকচারার(বাংলাদেশ স্টাডিজ) শাহেদ সরোয়ার।
রাবিপ্রবির বর্তমান সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. নিখিল চাকমা বলেন, "আগামী বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। ২০২৬ সালে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।"
এসময় শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন,"আমরা প্রথমে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা নিয়ে কাজ করবো। এর পর ধাপে ধাপে অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সমস্যা নির্মূল করা গেলে অন্যান্য দিকে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যাবে।”
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, "শিক্ষক সংকট রাবিপ্রবির অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এই বিষয় নিয়ে ইউজিসির সাথে বৈঠক করেছি। নতুন বছরে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী। শিক্ষার্থীরা যেন কোন ধরনের সেশন জটে না পরে তার দিকে নজর রেখে আমরা আগামী মাসে একটি আলোচনার আয়োজন করেছি। আশা করছি সেখানে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।”
সরজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে রাবিপ্রবির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী ভবনে। চলতি বছরের শেষের দিকে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্য চোখে পরেনি। ফলে অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ।
এদিকে ভাড়া করা আবাসিক হলেই দশ বছর পার করেছে আবাসিক শিক্ষার্থীরা, যেখানে নেই কোনো আধুনিক সুযোগ সুবিধা। নিরাপত্তা, ইন্টারনেট সংযোগ, রিডিংরুম, ডাইনিং সমস্যা নিয়ে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। কিছু সমস্যা সমাধান হলেও বাকিটা থেকে যায় সমাধানের বাহিরে।
অন্যদিকে, লাইব্রেরিতেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। মাত্র ৪০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইব্রেরিতে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় উপচে পরা ভিড়। সিট সংকটের কারণে অনেকেই বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারেনা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লে যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। মাত্র চারটি যানবাহন দিয়ে রাবিপ্রবির কার্যক্রম চালিয়ে আসছে প্রসাশন। বেশিরভাগ সময়েই ঠাসাঠাসি করে শিক্ষার্থীরা এসব বাসে চলাচল করে থাকে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের বাহিরে খেলার মাঠ ও বিনোদন ব্যবস্থান অভাব বোধ করেন রাবিপ্রবিয়ানরা। খেলাধুলা জন্য নেই তেমন কোনো মাঠ। নামমাত্র একটি খেলার মাঠ নির্মাণ করেছে রাবিপ্রবি প্রশাসন। তবে খেলার মাঠের উন্নয়ন আগের জায়গায় আটকে আছে।
উল্লেখ্য, দেশের ৩৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাবিপ্রবি দশ বছরেও কোনো স্থায়ী অবকাঠামো গত উন্নয়ন করতে পারেনি। পাশাপাশি নানা কারণে উন্নত পরিবেশ প্রদানে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন না হলে রাবিপ্রবি আরো পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।