জাবি ছাত্রদলের হাল ধরতে চান ছাত্রলীগ-শিবিরের আশ্রয়দাতা বাবর

জাবি
  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ নয় বছর পর ফের হালে পানি পেয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার কমিটি গঠনের আলোচনা। কমিটিতে নিজের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে শাখা ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। এতে যোগ হয়েছে প্রাক্তনদের ‘নিজের লোক’ আসীন করার রাজনীতি। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, কমিটিতে নেতৃস্থানীয় পদে আসার দৌঁড়ে আলোচনায় আছেন 'বিতর্কিত' ছাত্রদল নেতা জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ২০১৬ সালে ঘোষিত শাখা ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে 'ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা ও শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতার' অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। 

ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি সপ্তাহেই জাবি ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি হতে যাচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটি পরবর্তীতে হল কমিটি গঠন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করবে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী সোহেল-সৈকতের নেতৃত্বে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছিল। এরপর জাবিতে ছাত্রদলের আর কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। তবে ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দল গোছাতে ছাত্রদলের কমিটি না থাকা দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শাখাগুলোতে কমিটি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এতে অন্যান্য নেতাকর্মীদের মতো দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বাবর। তবে নতুন পদপ্রত্যাশী জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের নামে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। 'বিতর্কিত' এই ছাত্রনেতার ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও জামাত-শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ রয়েছে৷ দল ভারী করতে এ সকল কর্মীদের দলে ভিড়িয়েছেন বলে জানা যায়৷  

ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র বলছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাইসুল রুবাইকে ছাত্রদলে পুনর্বাসন করেছেন বাবর। এছাড়াও শামীম মোল্লার হত্যার আসামী ইংরেজী বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ সালমানকে তার গ্রুপে নিয়ে কাজ করছেন। হামিদুল্লাহ সালমানের বাবা বর্তমানে চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমীরের দায়িত্বে আছেন৷ এছাড়া ছাত্রদলের এক মতবিনিময় সভায় তার গ্রুপের ছাত্রদল একজন কর্মী বিশ্ববিদ্যালেেয় শিবিরের সহাবস্থান এর পক্ষে কথা বললে তিনি চুপ থেকেছেন। এছাড়া ২০২০ সালে জাবি শাখার ছাত্রদল কয়েকজন নেতৃবৃন্দ তার নামে একাধিক অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সংসদ বরবার অভিযোগপত্র পাঠান। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘তিনি ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে (৩৯তম ব্যাচ) ভর্তি হয়ে শহীদ সালাম বরকত হলে উঠেন। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে না উঠে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বরাদ্দকৃত রুমে উঠেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এ সময় সে র‌্যাগিংয়ের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের জন্য কর্মী সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করার পর কমিটিতে পদ না পেয়ে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হল ত্যাগ করে ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটির বিরুদ্ধে তৎকালীন জাবি ছাত্রদল সভাপতি সোহেল রানা ও তার অনুসারীরা বিদ্রোহ করলে সোহেল রানা বহিষ্কৃত হন। জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর তার নিজের কর্মী সংকটের কারণে সোহেল রানার বিদ্রোহী অনুসারীদের নিয়ে কর্মী পরিচয় দিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্যকারীদের পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ৫ আগস্টের আগে বাবরকে বিদ্রোহীদের নিয়ে প্রায়ই টিএসটিতে আড্ডা দিতে দেখা গেলেও গত কয়েক বছরে কেন্দ্র ঘোষিত জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক অধিকাংশ প্রোগ্রামে তাকে দেখা যায়নি। 

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা বাবর বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমার প্রথম বর্ষের। সেই সময়ে হলে থাকা কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের মিটিংয়ে যায়নি বা গেস্ট রুম করেনি—এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি ছাত্রলীগের নির্যাতনের সবচেয়ে বড় শিকার। এসব মিথ্যাচারের জবাব কমিটি প্রকাশের পর দেব।”

সার্বিক বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেদ্রীয় নেতা আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।