ইবিতে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের নিয়ে মতবিনিময় শাখা শিবিরের

ইবি
  © টিবিএম ফটো

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। 

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের করিডোরে 'মেধা ও সততায় গড়ব সবার বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।

সভায় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইবি শাখা শিবিরের সভাপতি মাহামুদুল হাসান। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইবি পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায় এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দাস ও শোভন হালদারসহ অর্ধ-শতাধিক বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর শিক্ষার্থীরা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বলেন, 'হলের খাবারের প্রতি প্রশাসনের আরো সর্তক হতে হবে। এটা হিন্দু শিক্ষার্থীদের সংবেদনশীলতার বিষয়। আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা প্রশাসনের অবগত করেন, একই চামচ ও পাতিল একাধিক তরকারিতে যেন ব্যবহার না করে।’

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ আমাদের বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। চাকমাদের  অনেকটা পিছিয়ে পরা জাতি বলা হয়। পাহাড়ি মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। অনেক লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের টিকে থাকতে হয়।  অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জাতি থেকে আমরা একটু আলাদা। আমাদের আলাদা কালচার ও সংস্কৃতি আছে। প্রতিটি হলে আমাদের জন্য রুম বরাদ্দ থাকলেও শেখ রাসেল হলে আমাদের রুম বরাদ্দ নেই। ছাত্রশিবিরের প্রতি অনুরোধ ছাত্রসংগঠন হিসেবে আপনারা এই বিষয়টা দেখবেন।’

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী প্রদীপ কুমার দাস বলেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সকলের, আমরাও মেধার ভিত্তিতে চান্স পেয়েছি। মাতৃভূমির টানে পিছু হটবো না। কারণ এ মাতৃভূমিও আমাদের সবার। মেধা ও সততায় আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। 
এছাড়াও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তিনি।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী তুষার মালাকার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির কর্তৃক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা একটা ভিন্নধর্মী আয়োজন। তারা আমাদের সকল দাবি দাওয়া গুলো শুনছে এবং প্রতিনিধিত্বশীল একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। ইবি শাখা ছাত্রশিবির কে ধন্যবাদ জানাই।'

মন্টু চাকমা বলেন, 'আলাদা সংস্কৃতি থাকায় আমাদের জীবনযাত্রার পার্থক্য আছে। এছাড়া হলে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে গুরুত্ব দিলে ভালো হয়।'

রিন্টু চাকমা বলেন, 'আসলে মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের নামে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হতো। যেহুতু আমরা দূরদূরান্ত থেকে আসি, ভালো রাখার জন্য প্রশাসন চেষ্টা করেছেন। শিবিরের ভাইয়েরা আমাদের প্রতি সহনশীলতা দেখাবেন। চলাফেরায় কোনো ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।' 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন ‘প্রচলিত যে রাজনীতি গুম, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ইত্যাদি কাজের সাথে শিবিরের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, ইসলামী ছাত্রশিবির শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আদর্শিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কাজ সবসময় একটি আদর্শ লালন করা, যে আদর্শ মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও অধিকার আদায়ের কথা বলে। মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ কে জাগ্রত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরির জন্য সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক তৈরির চেষ্টা করে ইসলামী ছাত্রশিবির। বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।’

শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য আদর্শে বিশ্বাসীদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো তারা তাদের আদর্শ প্রচার করুক আমরা আমাদের আদর্শ প্রচার করবো। মানুষ তার বিবেককে কাজে লাগিয়ে ভালোমন্দ বিচার করে গ্রহণ করবে।

অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মেয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন এলে। উত্তরে বলেন, তাদের ধর্মের নির্দেশ অনুযায়ী তারা যা পোশাক পড়বে এই নিয়ে আমদের কোনো সমস্যা নাই। তাদের ধর্মীয় কোনা চর্চার বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারি না।’