রাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার সহ ২১ দফা দাবি রাবির সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের
- রাবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৭ PM , আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪১ PM

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) রাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার ও শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন এবং ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস দখলদারিত্ব মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সহ ২১টি দাবি রাবির সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের।
বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি গুলো উপস্থাপন করেন তাঁরা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্বাস করে, বিশ্ববিদ্যালয় হলো অপার সম্ভাবনার একটি জায়গা। জ্ঞান উৎপাদনের কারখানা হিসেবে এটি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সুস্থ পরিবেশে জ্ঞানচর্চায়, গবেষণায় মগ্ন হবে এটাই কাম্য। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এমন পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংস্কারের লক্ষ্যে অতীব প্রাসঙ্গিক বলে তারা ২১টি দাবি উপস্থাপন করেন।
১. ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস দখলদারিত্ব মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার করে অবিলম্বে শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
২. ক্যাটারিং বন্ধ করে ভর্তুকি মূল্যে হল ডাইনিং চালু করতে হবে। ক্যাফেটেরিয়াকে সম্পূর্ণ অবাণিজ্যিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
৩.মেডিকেল সেন্টারে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স টেকনিশিয়ান নিয়োগ, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, ঔষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বয়োজ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক অসচ্ছলতার ভিত্তিতে হলের সিট বন্টন করতে হবে। নিয়মিত আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি মুক্ত সিট বন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে বাসের সংখ্যা ও ট্রিপ বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক আবেদন ফি কমিয়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
৭. ফরম ফিলাপ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। ফরম ফিলাপে হল প্রভোস্টের স্বাক্ষরের জন্যে ধার্যকৃত ৫০ টাকা বিবিধ উন্নয়ন ফি বাতিল করতে হবে।
৮. অবিলম্বে জিয়া ও হাবিবুর রহমান হল সংলগ্ন রাস্তা, স্টেশন বাজার হতে বিনোদপুর অভিমুখের রাস্তা সংস্কার করতে হবে।
৯. গবেষণার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণা তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক জার্নালে মানসম্মত গবেষণা প্রকাশের জন্যে শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
১০. শিক্ষক নিয়োগে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পিএইচডিধারীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা, ছাত্র ছাত্রীদের সামনে ডেমো ক্লাস ও ভাইভা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষকদের পাঠদান দক্ষতা, গবেষণা ও নিরপেক্ষতা মূল্যায়নের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১১. স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে টিচিং এ্যাসিস্ট্যান্ট ও রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
১২. সেশন জট নিরসনে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, ক্লাসরুম নির্মাণ ও দ্রুত ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩. ধনীর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন ও উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের হাতিয়ার 'ইউজিসির কৌশলপত্র' বাতিল করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ আয়ের নামে শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন, সুইমিংপুল, অডিটোরিয়াম সহ অন্যান্য অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ এবং সন্ধ্যাকালীন কোর্স বাতিল করতে হবে। বিভাগ উন্নয়ন ফি সহ সকল অন্যায্য ফি বাতিল করতে হবে।
১৪. সংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতি বছর বাজেট কিভাবে খরচ হবে তার অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন সমূহের জন্যে রুম বরাদ্দ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি নির্মাণ করতে হবে।
১৫. কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম, টিএসসি, ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যালারির ফি শিক্ষার্থী বান্ধব করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ফি মুক্ত অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. ক্যাম্পাসের চা দোকান উচ্ছেদ করে জনপরিসর ধ্বংস করা চলবে না। আড্ডা, গান, বিনোদন সহ অন্যান্য সহ-শিক্ষা মূলক কর্মকান্ডের জন্যে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে হবে। লাইব্রেরির আধুনিকীকরণ করতে হবে।
১৮. যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। ক্যাম্পাসে সংঘটিত যৌন নিপীড়ন, র্যাগিং ও নির্যাতনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে নিপীড়নের ইন্ধনদাতা ও সমর্থনকারীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
১৯. নারী শিক্ষার্থীদের জন্যে মানসম্মত ওয়াশরুম এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে বিশেষায়িত ওয়াশরুম নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ওয়াশরুমে সাবান সরবারহ করতে হবে।
২০. উপস্থিতির উপর নাম্বারের সামন্তীয় প্রথা বাতিল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ধরের রাখতে পাঠ্যকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগে তড়িঘড়ি করে চালু হওয়া সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। উপযুক্ত আয়োজন, অবকাঠামো, পরিবেশ নিশ্চিত না করেই সেমিস্টার বাস্তবায়ন চলবে না।
২১. মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবার মানবৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করতে হবে।