ব্যথায় কাতর ব্যথার দান

জাককাইনবি
  © ফাইল ছবি

নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টার "ব্যথার দান"। প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি, চিকিৎসক, স্টাফ এবং নার্সের ও সংকটের ফলে দীর্ঘদিন ধরেই আশানুরূপ কোনো সেবা দিতে পারছে না মেডিকেল সেন্টারটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ টি বিভাগে প্রায় ৯০০০ শিক্ষার্থী এবং ৩৫০ এর অধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা - কর্মচারীও তাদের পরিবারের জন্য রয়েছে এই মেডিকেল সেন্টারটি। কিন্তু এতো সংখ্যক সেবাগ্রাহীদের জন্য যৎসামান্য স্বাস্থ্যসেবা থাকায় শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, মেডিক্যাল সেন্টারটিতে প্যারাসিটামল, ওমিপ্রাজল, সেটিরিজিন হাইড্রোক্লোরাইড জাতীয় ওষুধ এবং প্রাথমিক কিছু ওষুধ ছাড়া কোনো ওষুধই পাওয়া যায়না।

অন্যদিকে মেডিক্যাল সেন্টারটির চিকিৎসা সরঞ্জাম ও উপকরণ নেই বললেই। কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ও উপকরণ দীর্ঘদিন না ব্যবহার এবং অব্যবস্থাপানার ফলে এখন অকেজো হওয়ার পথে। এতে নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থ। ফলে শিক্ষার্থীদের কিছু হলেই, রেফার করা হয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়তো ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়াও সপ্তাহে শুক্র-শনিবার মেডিক্যাল সেন্টারটি বন্ধ রাখার ফলে, শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই ক্ষোভ থেকে  দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী লেখনী দিয়ে তাদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

এই বিষয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিলা জাহান বলেন,  মেডিক্যাল সেন্টারে  নিয়মিত ডাক্তার থাকেনা। যে কোনো সমস্যা হোক শুধু ২ টা নাপা দিয়ে পাঠিয়ে দিবে নয়তো ময়মনসিংহ হাসপাতালে যেতে বলবে। তারা আদৌ ডাক্তার কিনা সন্দেহ আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টার পর এবং সপ্তাহে ২ দিন বন্ধ বন্ধ রাখা হয় মেডিক্যাল সেন্টারটি। তাহলে কি আমাদের শুক্র-শনিবার কিংবা সন্ধ্যা সাতটার পর অসুস্থ হবো না? এক কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন, তাই নিয়ম রক্ষার্থেই এটি রাখা হয়েছে।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান তালুকদার বলেন, নামে ব্যাথার দান হলেও কাজে কোনো ব্যাথার সমাধান দেখি না। কিছুদিন আগে আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোনো চিকিৎসা পাইনি। এই মেডিকেল সেন্টার আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পারেনি উল্টো বাড়িয়েছে। 

এই ব্যাপারে ব্যথার দানের পরিচালক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, আগের প্রক্রিয়ায় আমরা কোম্পানি গুলো থেকে ওষুধ নিতে পারিনা তাই কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি খুব শীগ্রই সমাধান করার। শুক্র ও শনিবার খোলা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসক সংকট রয়েছে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হলেই আমরা সপ্তাহে সাত দিনই সেবা দিতে পারবো এবং আমরা নির্দিষ্ট রুটিন মাফিক ডিউটি করি। এতে করে প্রতিদিন সবাই উপস্থিত থাকে না, তবে চিকিৎসক নিয়োগ হলে এই সমস্যা ও সমাধান হয়ে যাবে। 

ছাত্র উপদেষ্টা পরামর্শক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ব্যথার দানের সমস্যা গুলো নিয়ে প্রশাসন উদ্বিগ্ন। কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছে না। ইতিমধ্যে ১/২ জন চিকিৎসক নিয়োগের কাজ চলমান, ইউজিসি থেকে অনুমোদন দিলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যথার দান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সকল সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  শুক্র শনিবার খোলা রাখার বিষয়টি ও ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করে সর্বদা পর্যবেক্ষণ করা হবে যাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা নিশ্চিত করা যায়। একই সাথে সকল সংকট নিরসনে ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।