ভুয়া সনদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ ইমাম নিয়োগের অভিযোগ

নজরুল
  © সংগৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদে এবং নিয়োগের শর্তপূরণ ছাড়াই পেশ ইমাম পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৭ মার্চ (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবদুল হাকিম নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে তিনি সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন ছাড়াই যোগদানপত্র জমা দিয়েছেন। 

জানা যায়- পেশ ইমাম পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, বড় কোনো মসজিদ হতে কমপক্ষে পাঁচ বছরের ইমামতির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে আব্দুল হাকিম ঢাকার আফতাব নগরের লেকভিউ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বায়তুল মামুর জামে মসজিদে খতিব হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ দেখিয়ে আবেদন করেন আব্দুল হাকিম। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান স্বাক্ষরিত সনদটিতে ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা দেখানো হলেও অনুসন্ধানে উঠে আসে, ২০১৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিতই হয়নি।

এ ব্যাপারে বায়তুল মামুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান- আমি বিষয়টি শুনেছি, অভিজ্ঞতার সনদে আমি কোনো স্বাক্ষর করিনি।  আমাদের মসজিদটি  যেখানে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ২০১৯ সাল থেকে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তিনি আরও জানান, আব্দুল হাকিম সেখানে আনুমানিক দুই বছর খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কখনোই ইমাম ছিলেন না। 

অন্যদিকে এই ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদটি সত্যায়ন করেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
এসব ব্যাপারে জানতে আব্দুল হাকিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। 
 

এছাড়াও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে উল্লেখ ছিলো শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আব্দুল হাকিম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে এলএলবি সম্পন্ন করেও পেয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত। তার বয়স নিয়েও উঠেছে জালিয়াতির অভিযোগ। তার আবেদনপত্রের সাথে  যুক্ত বিভিন্ন সনদে ভিন্ন ভিন্ন জন্মসাল দেখানো হয়েছে। তার কয়েকটি সনদে জন্ম সাল ১৯৮৭ দেখা গেলেও, জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর জন্ম সাল ১৯৯১ দেখা যায়।

এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে আরেক পেশ ইমাম প্রার্থী আনোয়ার হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়াও স্বচ্ছতার সাথে ইমাম নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ডে একজন আলেম রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। 

নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দু'বার বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়েছিল। ২ মার্চ ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখায় ভেরিফিকেশন চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবেদন না আসায় ৯ মার্চ ঢাকার মালিবাগ এসবি শাখায় পুনরায় ভেরিফিকেশন চাওয়া হয়। তার এক দিনের ব্যবধানে ১০ মার্চ অতিরিক্ত আইজিপি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) বরাবর প্রতিবেদন চাওয়া হলে, আব্দুল হাকিমের পরিবার জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, পেশ ইমাম হিসেবে আব্দুল হাকিমকে সোমবার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপত্র দেওয়ার পর আরেকজন প্রার্থী অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুস্পষ্ট নীতিমালার আলোকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর তার আবেদনটি এসেছে এবং  সংশ্লিষ্ট দপ্তর যাচাই-বাছাই করে তার ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করেছে। এরপর তার লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। বাছাই বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সবকিছু বিবেচনা করে তাকে বাছাইবোর্ড কর্তৃক সুপারিশ করা হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিন্ডিকেট থেকে এই সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এখন যেসব কথাগুলো আসছে সেসব খতিয়ে দেখবো।