ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরছেন বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বুটেক্স
  © টিবিএম ফটো

ঈদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি মিলন, আনন্দ আর আবেগের এক বিশাল উপলক্ষ। প্রতি বছর ঈদ এলেই সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেতে ওঠে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই উন্মুখ হয়ে থাকে। তাই যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে, তারা নাড়ির টানে ছুটে যায় নিজ ঠিকানায়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা আসে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। একাডেমিক ব্যস্ততায় বছরের বেশিরভাগ সময় তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও শৈশবের বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউশন—সব মিলিয়ে তারা যেন সময়ের চাপে বন্দি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি সেই বন্ধন খানিকটা শিথিল করে। এ সময় তারা বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটায়, শৈশবের স্মৃতিগুলোতে ফিরে যায় এবং ঈদের আনন্দকে আরও রঙিন করে তোলে। তাই বুটেক্স শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদ শুধু একটি উৎসব নয়; বরং পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে ফিরে যাওয়ার এক বিশেষ উপলক্ষ।

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ফুয়াদ বলেন, ঈদের ছুটিতে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো আমার মন ছটফট করতে থাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য। শহরের যান্ত্রিকতা ও একাডেমিক চাপের মাঝে একটু স্বস্তি খুঁজতে মন চায় মূল শিকড়ের দিকে ছুটে যেতে। রমজানের শেষের দিনগুলোতে হলে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। ক্লাস-ল্যাবের ব্যস্ততা কমে আসে, করিডোরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ঈদের ছুটির আমেজ। বন্ধুদের আলোচনার প্রধান বিষয়— "কবে বাড়ি যাচ্ছিস?"

তিনি আরও বলেন, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা আর ঈদের কেনাকাটা—এসবের আনন্দই আলাদা। বিশেষ করে ইফতার তৈরিতে মাকে সাহায্য করা এবং শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে তারাবির নামাজ পড়ার স্মৃতিগুলো বাড়ি ফেরার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ছাড়াও টিউশন ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর ঈদের ছুটিতেও বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। বিশেষ করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খাবার নিয়ে সমস্যায় পড়ে।

শহীদ আজিজ হলের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক দত্ত জানান, আমাদের পরীক্ষা ২ মার্চ শেষ হলেও পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল ৯ মার্চ। তবে রোজাদার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা সেদিন থেকে ঈদের ছুটি নেয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাওয়ায় হল ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু টিউশনের কারণে আমার মতো কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বাড়ি ফিরতে দেরি করতে হচ্ছে।

খাবারের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, হলের ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় আশপাশের দোকান ও হোটেলের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে সেগুলোর মান ভালো নয় এবং স্বাস্থ্যকরও না। তাছাড়া বাইরে খাওয়ায় খরচও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাসের ব্যস্ততা হঠাৎ করেই ফুরিয়ে যায়। চিরচেনা করিডোর, ক্লাসরুম, হলের মাঠ—সব একে একে ফাঁকা হয়ে আসে। বন্ধুদের কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউবা লঞ্চে বাড়ির পথে রওনা দেয়। বিদায়ের মুহূর্তগুলো যেন একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি টানে। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি, বন্ধুরা হাসছে, কোলাকুলি করছে। সবার মুখে বাড়ি ফেরার উচ্ছ্বাস। অথচ আমি এখনো হলে বসে আছি।

তিনি আরও বলেন, আম্মুর মেসেজ আসে—"টিকেট কেটেছিস তো? বেশি দেরি করিস না, রাস্তার অবস্থা খারাপ।" ইচ্ছে হয় বলি, "হ্যাঁ আম্মু, কেটেছি।" কিন্তু সত্যি কথা হলো, এখনো টিউশনি করতে যাচ্ছি। ঈদের আগের দিনও ব্যাগ গুছিয়ে বের হওয়ার বদলে হাতে বই-পত্র নিয়ে ছুটছি টিউশনির জায়গায়।

শৈশবে ঈদের আগের দিন মানেই ছিল নতুন জামা আর বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। এখন বাস্তবতা বদলেছে। তবে যত দেরিই হোক, শেষমেশ বাড়ি যাবই। ক্লান্তি থাকবে, কিন্তু আনন্দের গভীরতা আরও বেশি হবে। কারণ ঈদ মানেই তো প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা, আর বাড়ি ফেরা মানেই সেই অপেক্ষার পরিসমাপ্তি।