পবিপ্রবি'তে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

 পবিপ্রবি
  © টিবিএম ফটো

যথাযোগ্য মর্যাদায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্বাধীনতা দিবস র‍্যালি,  আলোচনাসভা, শিশু কিশোরদের প্রতিযোগিতা, দোয়া এবং প্রার্থনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন হয়।

বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রভোস্ট কাউন্সিল, পবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, রোভার, ইএসডিএম ক্লাব, বাধনসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

সকাল ১০টায় কৃষি অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর মোঃ জামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র প্রফেসর ড. মোঃ হামিদুর রহমান, প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুব রব্বানী, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য  প্রফেসর ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ড. মোঃ মামুন অর রশিদ, এফবিএ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার, জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ মাহফুজুর রহমান সবুজ, সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ রিয়াজ কাঞ্চন শহীদ, সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি মোঃ মারসিফুল আলম রিমন এবং কর্মচারী মোঃ মোশারেফ হোসেন প্রমুখ।

জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ মাহফুজুর রহমান সবুজ বলেন, "বিগত ফ্যাসিবাদী সৈরাচারী অবৈধ আওয়ামীলীগ পাথরের মত চেপে বসেছিল আমাদের ঘাড়ে। তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধংস করে দিয়েছে। তারা হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ঘুম খুন করে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে ক্ষমতা দখল করে রাখে। শিক্ষাঙ্গনে নকলের মহোৎসব চলছিল। তাদের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধর্ষনের সেঞ্চুরী উৎসব পালন করেছে। তিনি বৈশম্যহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান।"

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান বলেন,
"আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এটি আমাদের বীরত্ব, আত্মত্যাগ এবং গৌরবের প্রতীক। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা মুক্তির শপথ নিয়েছিলাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, যার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের মোমেন্টাম ছিলো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুখ উদ্ধৃত ওমোঘ বানী, We revolt এর পর পরই স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করা।"

প্রো-ভিসি বলেন, "আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তখন দেশব্যাপী পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছিল, আর দেশের মানুষ দিশেহারা ছিল।

জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক সময়ে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন এবং শত্রুপক্ষকে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য করেছেন।


আজকের দিনে আমরা শপথ নিই, স্বাধীনতার আদর্শ সমুন্নত রাখব এবং বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।"

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন,  "আমরা আজ এক গৌরবময় দিনে একত্রিত হয়েছি ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য এক অনন্য অর্জনের স্মারক। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নির্যাতনের শৃঙ্খল ভেঙে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

আমাদের জাতীয় ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক অনন্য নাম। স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আত্মনির্ভরশীল, শিক্ষিত ও শক্তিশালী একটি জাতি গড়ে তুলতে হলে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। তার ‘একটি দেশ, একটি জাতি, একটি লক্ষ্য’—এই দর্শন আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে আছে।

শিক্ষা ও নৈতিকতার আলোয় আলোকিত জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আপনাদের আদর্শিক অবস্থান ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে, যাতে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে পারে।

সবশেষে, তিনি মহান স্বাধীনতা দিবসে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

এছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত এবং দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।