নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানবীকে অবমাননার অভিযোগে উত্তেজনা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ 

নজরুল
  © টিবিএম ফটো

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেট সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, ফেসবুকে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি এবং নিজেকে 'গড' দাবি করে প্রচার করতেন ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠ। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, দাবি তোলা হয় বিচারের।

অভিযোগ রয়েছে, ফার্স্ট গেট সংলগ্ন 'ফিল্ম জোন' এবং 'রেইনটাচ' ছাত্রাবাসে অবাধে মাদক সেবন, জুনিয়রদের রাতভর আটকে র‍্যাগিং ও মানসিক নির্যাতন করা এবং ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ধর্ম নিয়ে হেনস্তা করতেন ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠ, সারোয়ার মিম, সাদ, আবিরসহ ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। 

তবে মহানবীকে কটুক্তির অভিযোগের বিষয়ে ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠ বলেন, যে স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে, এই ধরনের কমেন্ট আমি করিনি৷ এটা ফেক স্ক্রিনশট। আর আমি ফুটবলার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের বড় ভক্ত, সে অনেকসময় সুপিরিয়রটি বোঝাতে 'গড' শব্দটা ব্যবহার করে। এজন্য আমি সার্কাস্টিকভাবে এটি ব্যবহার করেছি, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। আমি নিজের মতো থাকার চেষ্টা করি, ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করার কোনো চিন্তাভাবনাও আমার মধ্যে নেই।

জানা যায়, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুদ্বীপ এলাকায় ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সারোয়ার মিম ও আবিরের সাথে তাদের অন্য সহপাঠীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় এই ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট গেইটে পুনরায় সংঘর্ষ হয়। তখন সারোয়ার মিমদের গ্রুপের বিরুদ্ধে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে কটুক্তির অভিযোগ তুললে আশপাশের এলাকাবাসীও তাদের বিপক্ষে দাঁড়ায়। এসময় দুই পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়।

সংঘর্ষের বিষয়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইনজামুল হক অভি বলেন, চারুদ্বীপে  আমাদের বড় ভাইরা বসে ছিলো। তখন সাকিব ভাইকে 'আল্লাহর বান্দা' বলে সম্বোধন করে আবির ভাই। পরে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে সন্ধ্যায় সারোয়ার ভাইরা কয়েকজন মিলে ফার্স্ট গেটে জড়ো হয় এবং আমাদের উপর হামলা করে। পরে একজন পেছন থেকে চিল্লাই বলে তারা মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, পরে এলাকাবাসী তাদের প্রতিহত করে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও জুনিয়রদের র‍্যাগিংয়েরও অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব ঘটনা অস্বীকার করে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সারোয়ার মিম বলেন, বিকেলে আমরা চারুদ্বীপ বসে থাকার সময় হঠাৎ আমাদের জুনিয়র অভি এসে আমার কাঁধে হাত রেখে ৫ আগস্টের পরে তাদের সাথে এক মারামারির ঘটনার কথা বলে আমাকে মারতে শুরু করে। তখন ফেরাতে এলে আমার বন্ধু আবিরকে নাইমুল ইসলাম মঈন ও জুনিয়র রাতুল মারতে শুরু করে। পরে সেখান থেকে আমরা কোনভাবে ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে কিছু বন্ধু মিলে প্রক্টর অফিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সন্ধ্যার সময় তারা মিছিল করে এসে আমাদের উপর হামলা করে। ঐসময় তারা এলাকাবাসীকে উস্কিয়ে দেয় যে আমরা নবীকে নিয়ে কটুক্তি করেছি। এ ঘটনায় আমি, আবির, সাদ গুরুতর আহত হই। ফেসবুকেও এখন বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। কোনোধরনের কটুক্তি আমরা করি নাই।

এ বিষয়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিনুর রহমান বলেন, আমি বিষয়গুলো ফোনে শুনেছি। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খুবই স্পর্শকাতর এবং এর সত্যতা কতটুকু তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে সকল শিক্ষকদের সাথে কথা বলবো। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।