পেটানোর পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া গ্রুপের অ্যাডমিন ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাছির

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) 'বট বাহিনী'কে পেটানোর পরিকল্পনার কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শাখা ছাত্রদল। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে স্ক্রিনশটগুলো এডিটেড বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাহী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাছির কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে এবার উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

ফাঁস হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে আছেন স্বয়ং সুলতান আহমেদ রাহী, নাছির উদ্দিন নাছির, শাখা ছাত্রদলের সকল নেতা-কর্মীসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। আজ সকালে (৬ মে) ফাঁস হওয়া একই গ্রুপের একাধিক স্ক্রিনশটে এমনটা দেখা যায়। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।  

যাচাই করে দেখা গেছে, ভাইরাল হওয়া ‘রাবি ছাত্রদল’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী, যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এ তাহের, যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠু, যুগ্ম আহ্বায়ক সর্দার জহিরুল, সর্দার রাশেদ, , সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন, সর্দার রাশেদসহ অনেকে। ফলে এটি সংগঠনের বাইরে তৈরি হওয়া একটি গ্রুপ বলে দাবি করার সুযোগ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

'বটবাহিনী'কে পেটাতে চেয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য তুষার শেখ গণমাধ্যমে জানান, হ্যাঁ, এটা তো অস্বীকার করার কিছু নাই। আমি বট বাহিনীকে পিটাতে চেয়েছি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের না। আপনারা এভাবেই নিউজে উল্লেখ করবেন। আমি মার্ডার করলে আমাকে মার্ডারের আসামি দিবেন, চুরির আসামি দিবেন না।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমাদের ১২টিরও অধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে অনুষদ ও বিভাগের আলাদা গ্রুপও আছে। ফলে যে কেউ আমাদের যেকোনো গ্রুপে অ্যাড করতে পারে, এমনকি মহানগরী থেকেও। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমরা প্রতিটি গ্রুপের মেসেজ নিয়মিত দেখি। অনেক গ্রুপের নোটিফিকেশন আমরা বন্ধ করে রাখি, বিশেষ করে যেগুলো অপ্রাসঙ্গিক বা ব্যক্তিগত কথাবার্তার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ভাইরাল হওয়া অ্যাডমিন চিহ্নিত স্ক্রিনশটটির বিষয়ে তিনি বলেন, যে স্ক্রিনশটটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি সম্পূর্ণ এডিট করা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচারিত হয়েছে। এটি একটি মিডিয়া ট্রায়াল এবং আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।

তিনি আরও বলেন, ‘বট বাহিনী’ বলতে বোঝানো হয়েছে তাদের, যারা আমাদের বিরুদ্ধে সবসময় মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। আর নাসির ভাই কোনো কর্মী পর্যায়ের গ্রুপে কখনই যুক্ত থাকেন না। কেউ যদি তাকে এমন কোনো গ্রুপে অ্যাড করেও, সেটি তার দেখার সুযোগ থাকে না।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে গতকাল গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে গ্রুপে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন,  স্ক্রিনশটের বিষয়ে আমার জানা নেই। এটা আসলেই ছাত্রদলের কারো কি না, সেই বিষয়টা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে আমার খোঁজ নিতে হবে। কেন্দ্র থেকে আমানুল্লাহ আমান রাবি শাখার দায়িত্ব পালন করছে; আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সত্যতা জানার চেষ্টা করব। এর আগে কোনো মন্তব্য আমি করতে পারব না।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ মে) সকালে হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপের এই স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরতে দেখা যায়। সেখানে গ্রুপের নাম দেওয়া আছে রাবি ছাত্রদল। সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনার একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্ক্রিনশটটিতে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে কথোপকথন করতে দেখা গেছে। সেখানে একজন বলেছেন "ক্যাম্পাসের বাইরে ভেতরে না মামা এদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই পিটাতে হবে।"