নানার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চবিতে ভর্তি, এখন ৪র্থ বর্ষে!

চবি
  © সংগৃহীত

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে(চবি) ভর্তি হয়ে বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত সৈকত মল্লিক নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ওঠেছে গুরুতর অভিযোগ। তিনি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন তার নানা বরেন্দ্র চন্দ্র ভদ্রের মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে।

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৪৬ নম্বর(জিপিএ ছাড়া)পাওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় (FFQ2)’ আবেদন করে তিনি দর্শন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। অথচ সাধারণ মেধা তালিকায় এ নম্বর ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু কোটার মেধাতালিকায় ৮৯তম হয়ে পেয়ে যান কলা অনুষদের দর্শনের মতো একটি বিষয়।তার ভর্তি পরীক্ষার রোল ২১৯০৫৭ এবং বর্তমান আইডি ২১১০৫১১২।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের বাসিন্দা বরেন্দ্র চন্দ্র ভদ্রের নামে থাকা বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেজেট  (বেসামরিক গেজেট ৪৫৪০) ২০২৩ সালের ১৭ জুন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাতিল করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপন (স্মারক: ৪৮.০০.০০০০.০০৪.৪০.৩৭.১৬০.২০২৩-২৩১) অনুযায়ী, উপজেলার মোট ৫৪ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করা হয়, যার মধ্যে ২৮ নম্বরে ছিল বরেন্দ্র চন্দ্র ভদ্রের নাম। তার মেয়ে কনিকা মল্লিকের ছেলে সৈকত মল্লিক এই বাতিল হওয়া গেজেটের উপর ভিত্তি করেই কোটার সুবিধা পান।২০২১ সাল থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই বাছাইয়ের জন্য ভাতা বন্ধ ছিল বরেন্দ্র ভদ্রের। পরবর্তীতে জামুকার ৮৪ তম সভার সুপারিশক্রমে বাতিল করা হয় এই গেজেটটি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান,২০২২ সাল থেকে তাদের সাথে ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে সৈকত। কিন্তু তার ভর্তিতে ব্যবহার করা কোটার সনদ জালিয়াতি এবং নানা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি গোপন রেখে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ফেলতে যাচ্ছে প্রায়।

শিক্ষার্থীরা আরো এমন অনেকেই থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে জানান,কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোটা নয়, বিগত সময়ে বিভিন্ন ধরনের কোটার অপব্যবহার করে অনেকে অনিয়মের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়ে গেছেন কিংবা এখনো অধ্যয়নরত রয়েছেন। তারা বলেন, এটি 'জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থী' এবং এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সৈকত মল্লিক বলেন, "আমি ২০২১ সালে ভর্তি হওয়ার সময় সনদটি বৈধ ছিল। পরে বাতিল হয়েছে কিনা জানি না।" কিন্তু পরে তার নানার সনদ বাতিল হওয়ার বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কথা বললে তিনি সোজাসুজি কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, "যদি উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।"

তবে এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এফএম এনায়েত হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, স্বৈরাচার পতনের পর বিগত সময়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নয়, বরং যারা ভুয়া কাগজপত্র ও পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।