মধুটিলার পাহাড় আর সবুজ অরণ্য হারিয়ে যাওয়া
- হাবিবুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
- প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১০:১১ AM , আপডেট: ১৭ মে ২০২৫, ১০:১১ AM

জীবনের চেনা রুটিনে হাঁপিয়ে উঠলেই মন চায় পালাতে। প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে নিঃশ্বাস নিতে। ইচ্ছে করে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে। সেই ইচ্ছে কে পূর্ণতা দিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছুটে গিয়েছিল প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের মুহূর্ত ও নানা অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন বিভাগটির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর সাংবাদিক মো: হাবিবুর রহমান।
সকালবেলার নরম রোদে রওনা
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধূসর ভোরে বাসে চেপে যখন যাত্রা শুরু করি, তখন জানালার ওপাশে ঘুম জড়ানো প্রকৃতি ধীরে ধীরে জেগে উঠছিল। শহরের কোলাহল পেরিয়ে সড়কের পাশে ছুটে চলছিল অপরিচিত গাঁয়ের ছবি,ধানের খেত, ছোট্ট বাড়ি আর দূরের টিলার ছায়া। মনে হচ্ছিল, আমরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি শহর থেকে প্রকৃতির গভীরে। যত দূর যাচ্ছি ততোই মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করেছিল।
-মিম তাহমিম, মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, অর্থনীতি বিভাগ।
মধুটিলার প্রথম আলিঙ্গন
প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক পর, মধুটিলা ইকো-পার্কের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল এই পৃথিবী যেন আরেকটা। ঢুকে পড়লাম সবুজের রাজ্যে। বড় বড় টিলাগুলো যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, নীরবে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। পাখিরা গাছের ডালে গান গাইছিল, আর বাতাসে মিশে ছিল অদ্ভুত মিষ্টি একটা গন্ধ। এত কাছ থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ সত্যিই এক অনন্য!
-মনিরুল ইসলাম, মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, অর্থনীতি বিভাগ।
প্রকৃতির মমতায় মধুটিলা
ইকো-পার্কের প্রবেশপথ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একদিকে বিশাল টিলা, অন্যদিকে ঘন জঙ্গল। মাঝে মাঝে দেখা মিলল দুর্লভ কিছু পাখির। হাঁটতে হাঁটতে একটা সময় উঠে পড়লাম এক উঁচু টিলার চূড়ায়। সেখানে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে মেলে ধরা সবুজের সমুদ্র দেখে নিঃশব্দে মুগ্ধ হয়ে রইলাম।
-লিমন সরকার, দ্বিতীয় বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ।
মধুটিলার সৌন্দর্য
মধুটিলার বিশেষত্ব হলো এর উঁচুনিচু টিলা ও ঘন বন। একেকটি টিলা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল আমরা যেন কোনো গল্পের জগতে পা রেখেছি। পথের পাশে নানান রকমের গাছগাছালি, মাঝে মাঝে বুনো ফুলের গন্ধে ভরে যাচ্ছিল বাতাস। একটা সময় হাঁটতে হাঁটতে যখন এক উঁচু টিলার চূড়ায় পৌঁছালাম, তখন সামনে মেলে ধরল অসাধারণ এক দৃশ্য— দূরে সবুজের ঢেউ আর আকাশের নীল মেলবন্ধন। মধুটিলায় হাঁটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও, সেই কষ্টই যেন ভ্রমণকে করে তুলেছিল আরো রোমাঞ্চকর। মাঝে মাঝে সরু পাহাড়ি পথ ধরে চলতে গিয়ে হাত ধরাধরি করে এগোতে হয়েছে। কোথাও কোথাও ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক ধরনের মিশে যাওয়ার অনুভূতি।
-শারমিন অনামিকা, মাস্টার্স ২য় সেমিস্টার, অর্থনীতি বিভাগ।
সবুজের ভেতর হারিয়ে যাওয়া
হাঁটতে হাঁটতে আমরা উঠেছিলাম এক পাহাড়ি টিলার চূড়ায়। ঘাম ঝরছিল, হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম, তবুও পিছু হটিনি। চূড়ায় পৌঁছে যখন দূরে তাকালাম, তখন দেখা গেল— ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশের মিতালী। কোথাও দূরে ধোঁয়া ওঠা ছোট্ট কোনো গ্রাম, কোথাও আবার রোদে ঝিকমিক করছে বনভূমি। মনে হচ্ছিল, দম বন্ধ করে এই সৌন্দর্যকে মুঠোয় পুরে নিই।
-আশরাফুল আলম, ১ম ব্যাচ, অর্থনীতি বিভাগ।
বন্ধুত্ব আর প্রকৃতির বন্ধনে
টিলার গায়ে বসে নানা কল্পনা আঁকছিলাম। প্রকৃতির এত নিবিড় হওয়া কতটা প্রশান্তির তা বর্ণনাহীন। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে আড্ডার ফাঁকে চিপস, আইসক্রিম আর ঠাণ্ডা পানি। সেই সাধারণ খাবারও মধুটিলার আলো-ছায়ার খেলা আর বন্ধুত্বের উষ্ণতায় হয়ে উঠেছিল রাজকীয় ভোজ। হাসি, গল্প, আর মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতায় হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত— এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে একান্ত বন্ধুত্ব পাতানোর দিন।
-স্বর্না রানী দাস, চতুর্থ বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ।
বিদায়ের আড়াল
বিকেল নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মধুটিলার রূপ বদলে যেতে লাগল। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়তে পড়তে পাহাড়ের গায়ে নরম সোনালি রঙ ছড়িয়ে দিল। আমরা ধীরে ধীরে নামছিলাম টিলা থেকে। পেছনে ফেলে আসছিলাম কেবল কিছু পাহাড় আর গাছ নয়— ফেলে আসছিলাম হৃদয়ের একটা অংশ।
চোখের কোণে জমে থাকা মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এসেছি শহরে। কিন্তু মধুটিলার সেই সবুজ মায়া, পাহাড়ি বাতাস আর নির্জনতার ডাক— রয়ে গেছে বুকের ভেতর, মৃদু গুঞ্জনের মতো।