পূর্ব শত্রুতার জেরে শিক্ষার্থীর উপর হামলা, কানের পর্দা ছিঁড়ে গুরুতর আহত
- আশরাফুল আলম, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:০৫ AM , আপডেট: ১৮ মে ২০২৫, ১১:০৫ AM

পূর্ব বিরোধিতার জেরে হামলার শিকার হয়ে কানের পর্দা ছিঁড়ে গুরুতর আহত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কামরুল ইসলাম শিশির।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার (১৭ মে) বিদ্রোহী হলের ৫১৪ নম্বর রুমে এসে শিশিরের উপর অতর্কিত হামলা চালায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী নাসিফ হায়দার আকুল, সাজ্জাদ হোসেন রাব্বী, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সাদেকুর রহমান এবং অর্থনীতি বিভাগের তোফায়েল পুনম। এসময় শিশিরকে এলোপাতাড়ি চড় এবং কাঠ দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে কানের পর্দা ফেটে গেছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুদ্বীপ এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সভাপতি পদপ্রার্থী মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারী আকুল এবং ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রিয়েল সরকারের কর্মীরা। সংঘর্ষে রিয়েল সরকারের কর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ ফয়সাল এবং আকুল গুরুতর আহত হয়।
পরবর্তীতে রিয়েল সরকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে হলের সিট দখল এবং নানাভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে কর্মীরা। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পূর্বের ঐ ঘটনার জেরে রিয়েল সরকারের একেকজন কর্মীকে দফায় দফায় লাঞ্ছিত করতে থাকেন আকুল। এরই প্রেক্ষিতে রিয়েল সরকারের কর্মী কামরুল ইসলাম শিশিরকে একাধিকবার শাসানোর পর রুমে এসে মারধর করে আকুল এবং তার সহযোগীরা।
আহত শিক্ষার্থী কামরুল হাসান শিশির বলেন, দুপুরে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকুল, রাব্বীসহ ৪-৫ জন রুমে এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি ফোন দিতে রাজি না হওয়ায় কাঠ দিয়ে আমার হাতে সজোরে আঘাত করে এবং কানের কাছে কয়েকবার চড়-থাপ্পড় মারে। এছাড়াও আমাকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেয়।
ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং পূর্ব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, আকুলের ওপর পূর্বের কোনো হামলার ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না এবং সেই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর হলে থাকতে চাইলে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতেই হতো, একারণে যতটুকু রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে হতো ততোটুকই করতাম, এর বেশি না। আমি ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে পদে নেই, এমনকি ছাত্রলীগের কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্তও জমা দেইনি।
এদিকে শিশিরের ওপর হামলার ঘটনায় আকুলের সহযোগী সাদেকুর রহমান নিজেও ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা। বাবু-রাকিব কমিটিতে বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে সিট দখল করে রাখায় গত ৯ মার্চ তাকে হল থেকে বের করে দেয় হল প্রশাসন। তবে ছাত্রদলের পরিচয়ে আবারও হলে থাকতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে হামলার বিষয়ে আকুল বলেন, ৩ বছর আগের ঘটনায় হামলাকারীরা আমার সাথে দেখা করেছে। ছোটভাই হিসেবে আমি সবার সাথে বিষয়টা ক্লিয়ার করছি। তবে শিশিরকে আমি কয়েকবার ডাকছি কিন্তু ও দেখা করেনি। বরং আরেক বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা রহিমকে দিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর শিশিরের বডি ল্যাংগুয়েজও অন্যরকম ছিলো। এজন্যই আজকের ঘটনাটি ঘটেছে।
এ বিষয়ে বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মারধরের ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অভিযোগপত্র দিতে বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবো।