বান্ধবীকে রুম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম: জাবি শিক্ষার্থী
- জাবি প্রতিনিধি:
- প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১০:৩৪ PM , আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ১০:৩৪ PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রী প্রবেশের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ছবিতে এক ছাত্রীকে হলে কক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। কারণ অনুসন্ধানের সময় "বান্ধবীকে রুম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম" বলে মন্তব্য করেন ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, ২২ মে (বৃহস্পতিবার) ছবিতে থাকা ছাত্রী ইশরাত জাহান এবং ছাত্ররা—এফ. এম. প্রত্যয়, আমিনুল ইসলাম, সামিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদ—সবাই বাংলা বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ছাত্রী প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছাত্র হলে প্রবেশ করেছেন। এ ছাড়া ছবিতে থাকা অন্য ছাত্ররাও এ বিষয়ে কোনো অনুমতি নেননি। তবে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি গত বছরের অক্টোবর মাসের বলে দাবি করেছেন ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা।
জাহাঙ্গীরনগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮-এর হল সংক্রান্ত বিধিমালার (ভ) এর (২) এ উল্লেখ করা আছে, ‘ছাত্রদের হলে প্রভোস্টের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো ছাত্রী/নারী প্রবেশ করতে পারবে না’।এ ছাড়া অধ্যাদেশের চতুর্থ ধারায় শাস্তি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের (ঘ) তে বলা হয়েছে, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা অসদাচরণের জন্য একজন হল প্রভোস্ট তার হলের ছাত্র/ছাত্রীকে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার অথবা সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় অথবা বহিষ্কারাদেশকে পর্যাপ্ত মনে না করলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি উপাচার্যের নিকট প্রেরণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছবিতে থাকা শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের। তখন নজরুল হল সদ্য চালু হয়েছে। আমরা নতুন রুমে উঠেছিলাম, তাই আমাদের এক বান্ধবীকে রুম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবিটি তোলা হয়েছিল হলের ৫২৭ নম্বর কক্ষের পঞ্চম তলায়।
ছবিতে থাকা ছাত্রী ইসরাত জাহান বলেন, ছবিটি অনেক আগের। সম্ভবত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের। তখন কাজী নজরুল ইসলাম হলটি অফিসিয়ালি চালু হয়নি। এমনকি হলে কোনো নিরাপত্তা প্রহরীও ছিল না। অনেকেই তখন হলে গিয়ে ছবি তুলেছিল। আমি সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছি। আমার সঙ্গে আরো ৭-৮ জন বন্ধু ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ করে পুরোনো একটি ছবি ভাইরাল করে আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা এক ধরনের ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। কেন হঠাৎ করে এখন এই ছবি ছড়ানো হলো, সেটা আমার জানা নেই।বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ছেলেদের হলে ছাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাত স্বীকার করেন, হ্যাঁ, এটা অবশ্যই আমার ভুল হয়েছে। তবে তখন হলে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
ছবিতে থাকা আরেক শিক্ষার্থী সাদিমুল ইসলাম বলেন, এটা হল উদ্বোধনের দিনের ছবি।এই ছবিতে আমি নিজে আছি। হলে মেয়ে প্রবেশ দেখে আমরাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম প্রথমদিন তাই হয়ত হল প্রশাসন ঢুকতে দিয়েছে। এখানে আমি সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মামুন হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে অফিস সময়ের বাইরে থাকায় অনলাইনের মাধ্যমে কমিটির কাছে প্রাথমিক তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ছেলেদের হলে ছাত্রী প্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার পরিপন্থি। যেহেতু এটি হল প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই প্রভোস্ট এবং ওয়ার্ডেন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।