কবরের কাছে গিয়ে আমার দুই বছরের মেয়ে বলে, বাবা আসো: জুলাই যোদ্ধা আরিফের স্ত্রী

ববি
ইনসেটে জুলাই যোদ্ধা আরিফের মা  © সংগৃহীত

আমি যদি শহীদ হয়ে যাই, আমার মেয়ে গর্ব করে বলতে পারবে ‘আমার বাবা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে’। কিন্তু আজ যদি ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়, তাহলে আমিও ঘরে থাকতে পারব না। আমার মেয়েও থাকতে পারবে না, আপনরাও পারবেন না। ওই যে ঘুম পাড়িয়ে মেয়েটাকে রেখে বাবা চলে গেল, আর দেখা হলো না। আমার মেয়েটা এখন কিছুই বোঝে না। এখনো ‘বাবা বাবা’ করে ডাকে। কবরের কাছে গিয়ে বলে, ‘বাবা আসো!’ যখন জিজ্ঞেস করি, ‘ওখানে কী করে তোমার বাবা?’ বলে, ‘আল্লাহ দেয় আমার বাবা’। ওর বয়স মাত্র দুই বছর। এই করুন অবস্থা করে আমাদের রেখে গেল, কী অপরাধ ছিল আমাদের? শুধু যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে সেদিন রাস্তায় নেমেছিলাম।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরিফুর রহমানের স্মরণে এভাবেই মর্মান্তিক কথাগুলো বলেন তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুর ৩ টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা হল এ জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরস অফিস (ইউএনআরসিও)-এর সক্রিয় সহায়তায় এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর নিবেদিত তত্ত্বাবধানে আয়োজিত জুলাই অভ্যুত্থানে সরকারের দমন-পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

সোনিয়া আক্তার আরও বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে ‘শহীদ’ শব্দটির মূল্য থাকবে কি না। কীভাবে আমার সন্তান তার বাবাকে মনে রাখবে? এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই মুছে না যায়, প্রতিটি প্রজন্ম যেন তা স্মরণ করে। আমাদের শিশুরা যেন জানতে পারে ২৪-এর এই আন্দোলন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জীবনদানের ইতিহাস। অন্তত আমার মেয়ে যেন গর্ব করে বলতে পারে, তার বাবা দেশের জন্য লড়াই করেছিল। এই গণহত্যা কেউ যেন ভুলে না যায়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে দাঁড়াতেই হবে এটাই আমাদের চাওয়া।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সুমন সিকদারের ভাই শামীম সিকদার বলেন, গত ২৯ জুলাই বাড্ডা নতুন বাজার বাঁশতলায় শহীদ হন। ঐদিন সকাল ১০ ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে নতুন বাজারের সামবে থাকে। সকাল ১১ টার দিকে ভাইয়ের গুলি লাগলে  তার সাথে যারা ছিলো তারা তাকে নিয়ে যায়। আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় আমার ভাইয়ের গায়ে গুলি লেগেছে। ভাইয়ের সাথে আরো দুজন ছিলো তারাও গুলিতে আহত হয়। তারাও খুব আর্তনাদ করেছিলো। ওখানে ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয় তার মধ্য ভাইয়া সাথে সাথে মৃত্যু হয়ে যায়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুস্মিতা রায়। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের পরিবারবর্গরা। এসময় জুলাই গনঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ও বিশেষ অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।