'সরকার জানে, টাকা-পয়সা উধাও': নজরুল জয়ন্তীতে ইউজিসি চেয়ারম্যান
- আশরাফুল আলম, জাককানইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০২:২০ PM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ০২:২০ PM

"সবাই ভাবে টাকা পয়সা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের কাছে, ট্রেজারার মনে করে টাকা পয়সা সব কিছু ইউজিসি'র কাছে, ইউজিসি ভাবে টাকা-পয়সা সব সরকারের কাছে, সরকার জানে টাকা পয়সা সবকিছু উধাও করে নিয় গিয়েছে," বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। রবিবার (২৫ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দুর্বিষহ প্রতিকূলতার মধ্যেও যেভাবে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, তা ভাষায় পূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাঁর প্রতিটি কবিতায় বিদ্রোহের আগুন, স্বাধীনচেতা মননের দীপ্তি স্পষ্ট—যেমন: ‘মোরা বন্ধনহীন জন্মস্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’। নজরুল শুধু দ্রোহের কবিই নন, তিনি ছিলেন প্রেম, সাম্য ও সংগ্রামের প্রতীক। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গনে ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। সেই বিপ্লবী চেতনা ও সংগ্রামী আদর্শ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ প্রজন্ম আত্মত্যাগের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা ঘটায়।
‘মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’—এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ দুই দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তী।
১ম দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনায় সকাল ১১টায় নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। পরে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে শুরু হয় মূল আলোচনা পর্ব।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী,বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. জেহাদ উদ্দীন।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় কবিকে ত্রিশালের সন্তান হিসেবে আমরা গর্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন ত্রিশালের নানা স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। ময়মনসিংহ তথা ত্রিশাল যেন এক নজরুলময় অঞ্চল। তিনি ‘নজরুল নিকেতন’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং নজরুলের চেতনা ও দর্শন নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন।
আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা-২০২৫। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা মোট পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে সন্ধ্যা ৭টায় ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে। এতে আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানটি নজরুল চেতনায় প্রজন্ম গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এক গৌরবময় আয়োজন হিসেবে পরিগণিত হয়।