জমকালো আয়োজনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
- আশরাফুল আলম, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১১:৪০ AM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ১১:৪০ AM

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান আয়োজনে পালিত হয়েছে কবি কাজী নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে নজরুল ভাষ্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পন, বইমেলা, আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা, নজরুল পদক প্রদান, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
১ম দিনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এস এম এ ফায়েজ ও দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি আর আবরার। দুইদিনব্যাপী আয়োজনে মোট ৪টি অধিবেশনে চলে আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা। যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তারা নজরুলের সাহিত্য, দর্শন, সঙ্গীত, দ্রোহ ও সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচবা করেন।
২য় দিনের সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন
"জাতি হিসেবে আমরা একটি অপশক্তিকে পরাজিত করেছি, এবং এখন সময় এসেছে নতুন এক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার," । সোমবার (২৬ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে চলছি, যা একইসঙ্গে অপার সম্ভাবনাও নিয়ে এসেছে। একটি অপশক্তিকে পরাজিত করার পর এখন নতুন এক ব্যবস্থা তৈরির সময় এসেছে, যার জন্য সংস্কার অপরিহার্য। এই সংস্কার শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং সকলের ঐকমত্যে এটি সম্পন্ন করতে হবে। তিনি সংকীর্ণ দলীয় বা গোত্রীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এই সংস্কারকে সফল করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন আন্দোলনে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে। তরুণদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি 'অধিকার-বঞ্চিত' জাতি থেকে 'অধিকার-সমৃদ্ধ' জাতিতে পরিণত হয়েছে। নজরুলের জন্ম নতুন এক যুগের ইঙ্গিত দেয়। মাতৃভাষার সঙ্গে জ্ঞানের বিশ্বভাণ্ডারের সংযোগ ঘটাতে আন্তর্জাতিক অনুবাদমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সোমবার (২৬ মে) দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বিকেল ৪টায় নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। এরপর ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে আলোচনা পর্ব ও নজরুল পদক প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, এবং সিন্ডিকেট সদস্য এম জাকির হোসেন খান।
নজরুল পদক প্রদান পর্বে নজরুল সংগীতে অবদানের জন্য ইয়াকুব আলী খান এবং নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. রশিদুন নবীকে নজরুল পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান তার বক্তব্যে ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভাজনের রাজনীতি আমাদের খণ্ড-বিখণ্ড করে সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এখন আমাদের প্রয়োজন 'হাত ধরে রাখার রাজনীতি'—একটি সহমর্মিতা, সম্মিলন এবং সহযোগিতার রাজনীতি। এই সংকটকালে নজরুলই আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারেন এবং নজরুলের চর্চাকে কেন্দ্র করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
সন্ধ্যায় চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে নজরুল সঙ্গীত, রাগ, আবৃত্তি, নাচ ও নাটক প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও দুইদিনব্যাপী আয়োজনে বাহারি রঙে সাজে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি।