চাচাকে বাবা বানিয়ে চবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি!
- সারওয়ার মাহমুদ, চবি
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১০:৩১ PM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ১০:৩১ PM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার সুবিধা নিয়ে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান চৌধুরী (শিমুল)নিজের জন্মদাতা পিতার পরিচয় গোপন করে তার চাচাকে বাবা এবং চাচিকে মা বানিয়ে সকল একাডেমিক নথিতে তথ্য উপস্থাপন করেন এবং সেই সূত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইনডেক্স ও ভর্তি তথ্য ঘেঁটে দেখা যায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়া শিমুল, এনআইডি ও একাডেমিক কাগজপত্রে তার প্রকৃত পিতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা চাচা মফিজুল ইসলাম চৌধুরী এবং চাচি সামসুন্নাহার চৌধুরীর নাম ব্যবহার করেন।এই মিথ্যা পরিচয়ের ভিত্তিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (FFQ1) মেধা তালিকায় ৩৮তম হয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন, যেখানে সাধারণ মেধায় তার অবস্থান ছিল ৪৬৫৩তম।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক গ্রামের মফিজুল ইসলাম চৌধুরী একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা (বেসামরিক গেজেট নং ১০৬৫)। তবে তিনি শিমুলের পিতা নন, বরং তার চাচা। স্থানীয় সূত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিমুলের নিজের পোস্ট করা ছবিতেও তার প্রকৃত পিতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে নিজের পিতা পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিমুল নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, “আসলে আমি আমার একাডেমিক কাগজপত্রে চাচাকে বাবা হিসেবে ব্যবহার করেছি, তবে এটি আমি ছোট থাকতেই আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল। নিজের পিতার পরিচয় গোপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা ব্যবহারের প্রশ্নে বলেন -যেহেতু আমার সকল কাগজপত্র ঐভাবে তৈরি করা ছিল তাই কোটায় ভালো সাবজেক্ট পাওয়ার আশায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” তবে তিনি ঘটনাটি নিয়ে অনুতপ্ত বলেও জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী নিশ্চিত তার ছাত্রত্ব বাতিল হবে। এছাড়া আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।”
অভিযোগের বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রাকিবা নবীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে মাহমুদুল হাসান চৌধুরী শিমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। তার ভর্তি রোল নম্বর ৪৩৪৪৮০ এবং আইডি নম্বর ২১৫০১১২৬।
এই ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।