পরীক্ষার হলে ঢুকলেন সেই বেলায়েত শেখ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ জুন ২০২২, ১০:৪৯ AM , আপডেট: ১১ জুন ২০২২, ১১:২৪ AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন ৫৫ বছর বয়সী মো. বেলায়েত শেখ। শনিবার (১১জুন) সকাল দশটার সময় তিনি পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তার পরীক্ষার কেন্দ্র হলো এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবন। সবার আগে তিনি কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।
গণিত ভবনের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস বলেন, সবার আগে আমরা বেলায়েত শেখকে আমরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিয়েছি।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেতে সবার দোয়া চেয়েছেন বেলায়েত শেখ। তিনি দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, দেশবাসীসহ সকলের ভালোবাসার কাছে চিরঋণী আমি। একই সঙ্গে দোয়া চাই আমি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করার স্বপ্ন আছে আমার। এ কারণে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।
কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছেন তার ছোট ছেলে সাদেক শেখ জীবন। তিনি জানান, আমার ভাইয়া, আপুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানো বাবার খুব স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তারা তা পারেননি। তাই আক্ষেপ ঘুচাতে বাবা পরিক্ষা দিচ্ছেন। আমি বাবার সাথে এসেছি, বাবা পরিক্ষার হলে প্রবেশ করেছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। চলতি বছর বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে তিনি। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন।
তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার। সেই লক্ষ্যে সাইফুরস ভার্সিটি কোচিংয়ের মাওনা শাখায় ক্লাসও করছেন তিনি। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। জাতীয় দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুর প্রতিনিধি তিনি। এছাড়া জেটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।
জানা গেছে, বেলায়েত শেখের জন্ম ১৯৬৮ সালে। ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে অভাব দেখেছেন। এর মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। অভাবের তাড়নায় ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।
বেলায়েত জানান, ১৯৮৩ সালে আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন বাবার অসুস্থতা এবং অভাবের তাড়নায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালে পরীক্ষা দিতে চাইলাম। সে বছর শুরু হলো বন্যা। ১৯৯০ সালেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে সময় মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের কথা ভেবে বিয়ে করি। বাবার তখনও অভাব ছিল। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। ২৫-২৬ বছর একাধারে আমিই সংসার চালিয়েছি। এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করেছিলাম। মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ ছিল। ওইসব করেই সংসার চালাতে হয়েছে। ভাই-বোনদের পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব ছিল আমার ঘাড়ে। কিন্তু তারপরও তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারার আক্ষেপ রয়ে গেছে। এই সময়ে আর লেখাপড়ারও সুযোগ পাইনি।