ঢাবি-আইইউটি নয়, বুয়েটেই ভর্তি হবেন আবরার ফাইয়াজ
- মোমেন্টস রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৪:৪৮ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৪:৪৮ PM

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলে মারা যান বড় ভাই আবরার ফাহাদ। ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও ভর্তি হওয়া নিয়ে ছিলেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। তার ওপর গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) ভর্তি ছিলেন। চান্স পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
তবে, এবার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো। আবরার ফাইয়াজ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) বিভাগেই পড়বেন। এমনকি যে হলে তার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সেই হলে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। এতে মত দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরাও। বুধবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ফেসবুকের এক পোস্টে আবরার ফাইয়াজ নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে, ৩০ জুন বুয়েটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আবরার ফাইয়াজ মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থান দখল করেন, যন্ত্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি।
ফল পেয়ে খুশি হলেও আবরার ফাইয়াজ সেসময় জানিয়েছিলেন, ইচ্ছা আছে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার। তারপরও পরিবারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। দুপুরে বুয়েটে ভর্তি ব্যাপারে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাইয়াজ।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, পরিবারের সবার মতামতের ভিত্তিতে আমি বুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু আপনারা অনেকেই নিজেদের মতামত জানিয়েছিলেন তাই এই ব্যাপারটা আপনাদের জানানো।
“সত্যি বলতে বাসার কেউই সরাসরি আইইউটি অথবা বুয়েট এমন কিছু বলেনি। প্রায় সবাই বলেছে, যেখানে আমার ইচ্ছা সেখানেই ভর্তি হতে। তাই বলা যায়, আমার ইচ্ছা অনুসারেই এখানে ভর্তি হতে চাওয়া।”
“তবে আইইউটি (গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি) পরিবেশ আর প্রশাসন সবকিছুই খুবই ভালো লেগেছে আমাদের। বিশেষ করে আইইউটি প্রশাসন খুবই হেল্পফুল পেয়েছি। বুয়েট যেখানে পুরোই বিপরীত বলা যায়।”
তিনি আরও লেখেন, বুয়েট আর আইইউটিতে সুযোগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে আর একবারও ভাবিনি। কারণ সেখানে পরিবেশ খুবই নোংরা এবং রাজনীতি সবচেয়ে বেশি। আমার ভাইয়ার ইচ্ছা ছিলো এখানে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুয়েটে হয়ে যাওয়ায় এখানে পড়েনি।
“একটা বিষয় আসলে পরিষ্কার করার দরকার, সবাই প্রথম থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন যে বুয়েটে গেলে নিরাপত্তার ব্যাপারে এটা আসলে আমি কখনোই ভাবিনি। আবার ভাইয়ার কথা মনে পড়বে এজন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়বো এরকম কিছু নিয়েও চিন্তিত ছিলাম না আসলে। আমার ইচ্ছা আছে ভাইয়ার শেরেবাংলা হল হলেও সিট পেলে থাকবো।”
স্ট্যাটাসে আবরার ফাইয়াজ বলেন, আপনারা অনেকেই আমাকে নিজের ছোট ভাই ভেবে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকেই অনেক কিছু বুঝানোর জন্য নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
“আর কিছু মানুষের ধন্যবাদ একটু বেশিই প্রাপ্য। তারা হলেন আমার শিক্ষকরা। সত্যি বলতে গত প্রায় ২ বছর ৯ মাসে আমি যেখানেই একদিন হলেও পড়েছি প্রত্যেকেই নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। আমি আসলে অবাক হয়ে গেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে আমাদের প্রথমবার দেখা হয়েছে কিন্তু তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছে যেন আমরা কত পরিচিত। আর পড়ালেখার বিষয়ে তাদের অবদান তো ছিলই। এমনকি সাব্জেক্ট পছন্দের ক্ষেত্রেও তারা অনেক সাহায্য করেছেন। আল্লাহ তাদের প্রত্যেককেই ভালো, সুস্থ রাখুক এটাই চাই সবসময়। দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ দেখান সবসময়।”
আবরার ফাহাদ ছিলেন ফাইয়াজের একমাত্র ভাই। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, মা একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিতরা সবাই বুয়েটের ছাত্র ছিলেন।