শাবি শিক্ষার্থী হত্যা, সন্দেহে প্রেমিকা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৭:৩৭ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৭:৫৭ PM

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদকে হত্যার ঘটনায় প্রেমিকার সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। তাদের অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বুলবুলকে। প্রেমের সম্পর্কের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তাদের ধারণা।
এদিকে বুলবুলকে হত্যার পর অসুস্থ হয়ে পড়া প্রেমিকাকে যে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তিনি সেই হাসপাতাল থেকে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যান। যদিও সন্ধ্যায় পুলিশ তার অবস্থান ক্যাম্পাসে বলে নিশ্চিত করেছে। যা হত্যার সঙ্গে সন্দেহভাজনের সংশ্লিষ্টতার আরও বড় ক্লু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
এছাড়াও মঙ্গলবার সকালে পুলিশ বুলবুলের প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সেখানেও তিনি এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন বলে জানায় পুলিশ।
জানা যায়, বুলবুলকে সোমবার সন্ধ্যায় যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন তার সঙ্গে ছিলেন তার প্রেমিকা। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নগরের আখালিয়া এলাকার মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কাউকে কিছু না জানিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন তিনি।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘অসুস্থ ছাত্রীর সঙ্গে তার একাধিক সহপাঠী ছিলেন। তার নজরদারিতে হাসপাতালে ছিল পুলিশও। তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিকেল চারটার দিকে তিনি আমাদের কিছু না বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।’
যাওয়ার আগে তিনি হাসপাতালে থাকা সহপাঠীদের কিছু বলেছেন কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সহপাঠীদের ওই ছাত্রী বলেছেন, তিনি একটু আলাদা হয়ে মোবাইলে জরুরি কথা বলবেন। আর ওই সময়ে নজরদারিতে থাকা পুলিশ সদস্য খেতে গিয়েছিলেন।’
বাংলা বিভাগের ওই ছাত্রীকে মঙ্গলবার সকালেই হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘কালকের ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ওই ছাত্রী। সকালে আমরা তাকে হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি কিছু লুকোচ্ছেন। তবে অসুস্থ থাকায় তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।’ ওসি বলেন, ‘এখন শুনেছি তিনি হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। আমরা তাকে খোঁজার চেষ্টা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে সোমবার বুলবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যান সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল রোমান। তিনি বুলবুলের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সেই সুবাদে তার সঙ্গে ওই মেয়েটির কথাবার্তা হতো। রোমান বলেন, ‘ওই মেয়ে আর বুলবুলের সম্পর্ক ছিল। কাল বিকেলে তারা ক্যাম্পাসের গাজিকালুর টিলায় যায়। সেখানে সাতটা ৩০ মিনিটের দিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এরপর ৭টা ৩৮ এ ওই মেয়ে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দেয়। আমি তাতে রেসপন্স না করায় ৭টা ৫১ সে আমার মোবাইলে কল দিয়ে জানায়, বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’
রোমান বলেন, ‘আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ছিলাম। বুলবুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ সময় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে বললে সে রাজি হয়নি। ‘এ সময় আমি ওই মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করি। তখন তার কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ওই মেয়ে বলে- এক মিনিটে বুলবুলকে কয়েকজন খুন করে চলে গেছে। খুনিরা ছিতাইকারী।’
মেয়েটির খোঁজ পাওয়া গেছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘সে এখন ক্যাম্পাসে আছে। প্রক্টরদের কক্ষে তাদের জিম্মায় রয়েছে। ভয়ে সে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছে বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।’ বুলবুলকে হত্যায় ছিনতাইকারীদের সম্পৃক্ততার কথা আসছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি। তবে আমরা নিহত শিক্ষার্থীর মোবাইলটি খুঁজছি।’
শাবি ছাত্র হত্যায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে তাদের আটক করা হয় জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘আটকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চালাচ্ছি।’ এই হত্যার ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হক জালালাবাদ থানায় মামলা করেন।