যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞানে পড়তে চাই ঝিকরগাছার অদম্য তামান্না

মৃত্যু
  © টিবিএম ফটো

জীবন যুদ্ধের ময়দানে ছোটখাট বাধা বিপত্তির কাছে আমরা খুব সহজেই হার মেনে নিই। জীবন যুদ্ধে বাধা-বিপত্তি আসে, থেমে গেলে স্বপ্ন হারিয়ে যায়, যারা এই বাধা বিপত্তি পার করতে পারে তারাই সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় স্থান পায়।শুধু প্রয়োজন লক্ষ্য আর ইচ্ছাশক্তি! 

যশোরের ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির মেয়ে তামান্না আক্তার নূরা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় তিনি,সদা হাসোজ্জ্বল মুখ! তবে এ হাসির মাঝেও লুকিয়ে রয়েছে কিছুটা বিষাদের ছাপ।কারণ জন্ম থেকেই তার দুটি হাত ও একটি পা নেই। শুধুমাত্র একটি পা-ই তার অবলম্বন!এই জীবনকে খুব সহজ ভাবেই মেনে নিয়ে চলছে তামান্না'র স্বপ্ন পূরণের অবিরাম চেষ্টা।

তামান্না এক পায়ে লিখে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি।

শুধু বাঁ পা নিয়ে জন্ম নেওয়া তামান্না শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে এবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত গুচ্ছ-পদ্ধতির স্নাতক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এ-ইউনিটের (বিজ্ঞান বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।টেবিলের ওপরে বসে এক পা দিয়ে খাতায় লেখেন তিনি,লেখায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দনের প্রতিচ্ছবি।

শনিবার (৩০ জুলাই) থেকে শুরু হয় ২২টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। যবিপ্রবিতে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ-ইউনিটের (বিজ্ঞান বিভাগ) এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তামান্না। পরীক্ষা শেষে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তামান্না বলেন, আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে, আমি আশাবাদী ভালো কিছু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন স্যার আমাকে মানসিকভাবে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন।

তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও কোন বিষয়ে পড়তে চান এই বিষয়ে জানতে চাইলে তামান্না বলেন, যদিও আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে আমরা পক্ষে ওখানে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আমি যশোরে থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করতে চাই। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হয়ে এখানে ভর্তি হতে পারি। 

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষাটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। যবিপ্রবি কেন্দ্রে দু’জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং একজন গুরুতর অসুস্থ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন, আমরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করেছি।’


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ