শহীদ মিনারে ঢামেক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর!

ঢামেক
ভুক্তভোগী ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন  © টিবিএম ফটো

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এক ছাত্র। গতকাল সোমবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।

এ ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে পরবর্তীতে তা জানাজানি হয়। তবে ঘটনায় জড়িতদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেন নি তিনি। ওই শিক্ষার্থী জানান, ঘটনার সময় ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল তার কাছে এসে পরিচয়পত্র দেখতে চায়, যাদের সবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোগোযুক্ত টি-শার্ট গায়ে ছিল। এসময় তিনি পরিচয়পত্র দেখতে না পারলে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি রাজধানীর শাহবাগ থানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দেবেন।

ফেসবুকের স্ট্যাটাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্র সাজ্জাদ শহীদ মিনারের মূল বেদির নিজে বসেছিলেন এমন সময় ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল তার কাছে আসে যাদের ঢাবির লোগোযুক্ত টি-শার্ট গায়ে ছিল। তারা আইডি কার্ড দেখতে চায় কিন্তু তিনি আইডি মেডিকেলে রেখে আসার কথা জানালে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।

তিনি বলেন, কলেজ লাইব্রেরিতে পড়াশোনা শেষে রাত ৯টার দিকে আমি শহীদ মিনারের দিকে যাই। সেখানে আমি একা একা বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। তখন আমি দেখি যে, দুই-তিন জন করে একেকটা দলে ভাগ হয়ে বেশ কিছু ছেলে শহীদ মিনারে আগতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, অনেককে সেখান থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে। তারা কেন এটা করছিলো আমার জানা নেই। এক পর্যায়ে তিনজন এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি সেখানে কী করছি। আমি বললাম, ‘আমি বসে আছি।’

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, তখন তারা আমার পরিচয় জানতে চায়। আমি আমার পরিচয় দিলে তারা আমার পরিচয়পত্র দেখতে চায়। আমার কাছে পরিচয়পত্র নেই জানালে তারা আমাকে বলে, ‘পরিচয়পত্র নেই কেন? আমাদের কাছে তো পরিচয়পত্র আছে।’ তখন আমি বললাম, ‘সবাই কী সবসময় পরিচয়পত্র নিয়ে ঘোরে?’ এই কথা বলার পর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একজন থাপ্পড় মেরে বসে। এরপর আরো দুই-তিনজন এসে আমাকে চড়-থাপ্পর মারা শুরু করে। 

তিনি বলেন, মারধরের একপর্যায়ে আমি চিৎকার করে বলে উঠি, ‘আপনারা চাইলে আমার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমার পরিচয়পত্র দেখে আসতে পারেন।’ এই কথা বলার পর তারা হয়তো বুঝতে পারে যে, আমি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র। তখন আমি কাউকে ফোন দিয়ে এনে হয়তো ঝামেলা করতে পারি, এই ভয়ে তারা আমাকে দ্রুত ওই স্থান থেকে বিদায় করার জন্যে তৎপর হয়ে ওঠে।

‘আমি চলে যাওয়ার সময় যে পারছিল, সেই আমাকে মারধর করছিল এবং চলে যেতে জোর করছিল। ঠিক এই সময় কেউ একজন আমার কানের ওপর জোরে থাপ্পর দিলে আমি বসে পড়ি। বসে কেন পড়লাম, এই অপরাধে একজন জুতা পায়ে আমার মুখে লাথি মারে। একারণে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। এরপর আমি চলে যেতে উদ্যত হলে যাওয়ার পথে যে যেভাবে পেরেছে আমাকে মারধর করেছে রিকশায় ওঠার আগ পর্যন্ত। আমাকে ৮ থেকে ১০ জনের মতো মারধর করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিনতাই ছিল নাকি অন্যকিছু ছিল জানি না।’

মারধরকারীদের কাউকে চিনতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, তাদের প্রায় সবার গায়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোযুক্ত টি-শার্ট ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তাদের পরিচয় জানা বা বোঝার উপায় ছিল না।

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এরকম ঘটনার অভিযোগ আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।