চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট: চাকরি পাচ্ছেন ঢাবির সেই শিক্ষার্থী
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩৯ PM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩৯ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সন্তোষ। সম্প্রতি চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে তিনি তার চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেন। সেই সন্তোষ রবি দাস চাকরি পেতে যাচ্ছেন। চাকরি দিতে আগামীকাল রোববার বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তাঁকে ডাকা হয়েছে। একটি স্কুলে খণ্ডকালীন চাকরি পাচ্ছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরের তার বাড়ি। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কাল বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সন্তোষকে ডাকা হয়েছে। কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাল বিকেলে ডিসি স্যার সন্তোষের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেবেন।
এ বিষয়ে সন্তোষ রবি দাস বলেন, আজ সকালে কমলগঞ্জের ইউএনও তাঁকে ফোন দিয়ে চাকরির জন্য আবেদনপত্র তৈরি করতে বলেন। কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বরাবর একটি আবেদনপত্র তৈরি করতে বলা হয় তাঁকে।
তিনি আরও বলেন, আমি পোস্টটি দিয়েছিলাম আমার মাসহ সব চা শ্রমিকের করুণ অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাকে চাকরি দিয়ে চা শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনটা যেন ভিন্নখাতে না নেওয়া হয়।
চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন সন্তোষ রবি দাস। তাঁর সেই ভাইরাল পোস্টের সূত্র ধরে চাকরি দিতে অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কেউ তাঁর চাকরি নিশ্চিত করেনি বলেন জানান সন্তোষ।
মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক চা–শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবি দাসের। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারান। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা।
২০০৭ সালে সন্তোষ রবি দাস যখন ক্লাস ফাইভে পড়েন তখন তাঁর মায়ের মজুরি ছিল ৮৮ টাকা। পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য বিনা মূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পান। তখন তাঁর মা সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে তাঁকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দিতেন।
২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হন। তখন তাঁর মা ১০২ টাকা করে মজুরি পেতেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দেন মা।
এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের টাকা জোগাতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আবার তাঁর মাকে ঋণ নিতে হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সন্তোষ। এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সন্তোষ।