পুলিশ পরিচয়ে ঢাবির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ছিনতাই ও নিপীড়ন
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৯ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৯ PM

মোটরসাইকেলে 'পুলিশ' লেখা স্টিকার ও নিজেকে 'পুলিশ বাহিনীর লোক' হিসেবে পরিচয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ছিনতাই ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ থেকে মুক্ত হওয়ার পর তুরাগ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন ওই ছাত্রী।
গত ২৫ আগস্ট ঢাবির তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে দুপুর দেড়টার দিকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এরপর রিকশায় উঠে বাসার দিকে যাত্রা শুরু করেন। ওই সময় তিনি অপহরণের শিকার হয়। পরে দিয়াবাড়ী এলাকার ১৬ নম্বর সেক্টরের ই-পাসপোর্ট ভবন থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূর থেকে পুুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
এদিকে, অভিযোগটির গুরুত্ব বিবেচনা করে থানা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) আরও একাধিক সংস্থা এর ছায়াতদন্তে নেমেছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশার নেয়। পথে গতিরোধ করে দাঁড়ান মোটরসাইকেল আরোহী ওই ব্যক্তি। এরপর ছাত্রীর হাতে থাকা একটি ব্যাগের দিকে তাকিয়ে কর্কশভাবে বলতে থাকেন, 'এই ব্যাগে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। এখনই আপনাকে থানায় যেতে হবে।' কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রিকশা থেকে নামিয়ে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকেন ওই ব্যক্তি। তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় নিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নেন।
এরপর তাঁকে নিপীড়নের শিকারও হতে হয়। ওই সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি সেই পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তরুণীর সঙ্গে এক ব্যক্তির এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি এগিয়ে যান। দ্রুত তরুণীর ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে মোটরসাইকেলে পালান অপহরণকারী। এরপর স্থানীয় ওই ব্যক্তি বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশকে জানান। পুলিশের একটি দল ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
মামলার এজাহারে ওই ছাত্রী বলেছেন, দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে কল্যাণপুরে নামেন। সোয়া ২টার দিকে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সব লুট করা হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, ঘটনাস্থল তুরাগ থানার অধীনে। এই ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন ওই শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলেছেন, যা ঘটেছে পুলিশকে সেটা জানিয়েছি। পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারব।
তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত তাঁরা যেসব আলামত পাচ্ছেন, তাতে দেখা গেছে, পুলিশ পরিচয়ে অপহরণে জড়িত ওই ব্যক্তির বেশভূষাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো। চুলও ছোট করে কাটা।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ওই ছাত্রীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িতকে শনাক্ত করতে নানামুখী তদন্ত চলছে। পৃথকভাবে ৪-৫টি টিম কাজ করছে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য মিলছে, তাতে পুলিশের ধারণা- পেশাদার কোনো অপরাধী মোটরসাইকেলে 'পুলিশ' লেখা স্টিকার ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিতে পারে। কল্যাণপুর থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত ৮-১০ কিলোমিটার হলেও পথে মোটরসাইকেলে ওই ছাত্রী কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। কারণ ওই ব্যক্তি বলছিলেন- 'আরেকটু দূরেই থানা'। কল্যাণপুর থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত পুরো রাস্তায় যতগুলো সিসিটিভি রয়েছে তার ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখা হচ্ছে। এতে মোটরসাইকেলের একটি অস্পষ্ট নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির বয়স ৩০-৪০-এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।