বেলজিয়ামের রানির এ সফর বাংলাদেশ-বেলজিয়াম সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে: তথ্যমন্ত্রী 

বেলজিয়াম
  © সংগৃহীত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বেলজিয়ামের রানি ও জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) দূত মাথিল্ডে ম্যারি ক্রিষ্টিন। তাঁর এই সফরকে ঘিরে পুরো ক্যাম্প এলাকায় কয়েকস্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, এবিপিএন সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রানি উখিয়ার কুতুপালং-এর ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেন।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় বেলজিয়ামের রানি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে সরাসরি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

রানির সঙ্গে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ক্যাম্পে পৌছে রানি প্রথমে ৩ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের একটি লার্নিং সেন্টারে পরিদর্শন করে তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি দেখেন তিনি। লার্নিং সেন্টারের রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের সঙ্গে কথা বলেন রানি। এরপর ৪ নম্বর ক্যাম্পে গাছের চারা রোপণ করেন। ক্যাম্পে জাতিসংঘের কার্যক্রমগুলো ঘুরে দেখেন তিনি। ক্যাম্পের ভেতর নারীদের পরিচালিত মার্কেট পরিদর্শনকালে তাদের দোকান ঘুরে দেখে কথা বলেন রানি। এরপর আরেকটি ওমেন সেন্টার পরিদর্শনের পর সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালে তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের বিষয়টি রানীর কাছে উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন সেন্টার, হলিচাইল্ড লার্নিং সেন্টার, উইমেন মার্কেট পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়েও রানি কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেলজিয়ামের রানির এ সফর বাংলাদেশ-বেলজিয়ামের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশের যে সহায়তা তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও জোরালো আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সসম্মানে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহায়ক হবে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে জাতিসঙ্ঘের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে দেখা করার জন্য রানি এখানে এসেছেন। দুপুরে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪-এ শরণার্থী শিশুদের লার্নিং সেন্টারে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলেন। পরে ক্যাম্প-৫-এ গাছের চারা রোপণ করেন। তিনি আরো জানান, বেলজিয়ামের রানির দিনব্যাপী সফরে শরণার্থী শিবিরে জাতিসঙ্ঘের কার্যক্রম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় প্রশাসন ও জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে বেলজিয়ামের রানি মাথিলডে ম্যারি ক্রিস্টিন আট ঘণ্টার সফর শেষে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ছয় ঘণ্টা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করেন তিনি।