শ্রীমঙ্গলে ‘ফাগুয়া’ উৎসবে মেতে উঠেছে চা শ্রমিকরা

ফাগুয়া উৎসব
ফাগুয়া উৎসবের একাংশ  © টিবিএম ফটো

বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর সকল জাতিগোষ্ঠীর ফাল্গুন উৎসব ‘ফাগুয়া’ পালিত। উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে সবাই মেতে ওঠে রঙের উৎসবে। দরিদ্র তবে পরিশ্রমি চা জনগোষ্ঠীর ফাগুয়াকে আরো রঙিন করে তোলতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করে ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ।

চা জনগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে ওঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মিলনে শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানির ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় এই ফাগুয়া উৎসব টি।

শনিবার (১১ মার্চ) বিকালে তিন টায় ফুলছড়া মাঠে নানান বয়সি হাজারো নারী পুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে ওঠলে সবুজ চায়ের বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য হয়ে ওঠে নানান রঙে রক্তিম। উৎসবে কেবল রঙের হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ২০টি পরিবেশনা। 

পত্রসওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসাথে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজও।

ফাগুয়া উৎসব

ফাগুয়া উৎসবটি আয়োজন উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান  । সাথে ছিলেন শ্রীমঙ্গলের উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, ইউএনও আলী রাজিব মিঠুন , মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত , এবং ৭ নং রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় বোনাজী, ৮নং কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়াল প্রমুখ । বলেন, ফাগুয়া উৎসবটি আসলে ব্যতিক্রম। এমন অনুষ্টানে অংশগ্রহন করে ভালো লাগছে।

সিলেট থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা চা জনগোষ্ঠির তরুণি কাজল গোয়ালা বলেন, আমি নিজে উদীচীর সাথে জড়িত। কিন্তু চা বাগানেই যে এতো নৃত্যগীতের সমাহার এখানে না আসলে আমার জানা হতো না। নিরহা, করমগীত আমি প্রথমবার দেখলাম।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কীম বলেন, চা বাগানে পৌঁছাতেই কানে বাজলো পাহাড়িয়া মাদলের সুর। চা বাগানের অন্য পাড়ায় গেলেও গিয়েও চোখে পড়লো একই দৃশ্য। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী সবাই নাচছে- গাইছে- আনন্দ করছে। অনেক আয়োজন দেখেছি তবে এমন আয়োজন প্রথম দেখলাম। চা বাগানের মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি এতো সুন্দর না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

দেউন্ডি চা বাগানের থেকে আসা প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, শত দুঃখ-কষ্ট, শত অভাব-অনটনের মধ্যেও উৎসবের কয়েকটি দিন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। শ্রমিকেরা এই আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দূর-দূরান্তের চা-বাগান থেকে মেয়েরা নাইওর আসে জামাইসহ।

আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন, ৩য় বারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনককে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরবর্তী বছর আরো বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে।

মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, চা বাগানের কৃষ্টি সংস্কৃতি যেন কোনভাবে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য আমরা উদ্দোগ নিয়েছি। ফাগুয়া উৎসব যেন বন্দ না হয় সেজন্য আমরা কিছু সহযোগীতা করেছি। এই সুন্দর সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব সবার। এটি যেন প্রত্যেকবার করা যায় সেজন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা করছি।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ