ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত, গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ফয়সাল আহমেদ (২৫)  © মোমেন্টস ফটো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ফয়সাল আহমেদ (২৫) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত।

কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তী ও একই ইউনিয়নের সূর্যকান্দি গ্রামের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ বাজারে কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তী গ্রামের চৌকিদার ইকবাল মিয়ার পুত্র আকাশ ও সূর্যকান্দি গ্রামের সাবেক মেম্বার হুমায়ুন মিয়ার পুত্র তোফাজ্জ্বল মিয়ার মধ্যে গাড়ি সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্-বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। গ্রাম পর্যায়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধা ৭ টা ১৫ মিনিটে কালিকচ্ছ বাজারে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় বাজারের কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হয়। এ সময় কলেজছাত্র ফয়সাল গুলিবিদ্ধ হলে আহত অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত ফয়সাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুট্টাপাড়া গ্রামের রাকিব মিয়ার পুত্র।

নিহতের পরিবারের দাবি, পুলিশের গুলিতে ফয়সাল নিহত হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে- ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।

ফয়সালের মা হালিমা খাতুন দাবি করেন, আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। নিহতের মামা ওসমান হারুনী বলেন, ফয়সাল পড়াশোনার ফাঁকে আমার ব্যবসা দেখাশোনা করত। আজ ঝগড়া শুরুর পর আমরা দোকানের তালা লাগাচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ এসে আমার ভাগ্নে ফয়সালের উপর গুলি করে। তাকে কেন গুলি করা হলো? আমরা তো ঝগড়ার সাথে জড়িতও না। এর বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, মোটরসাইকেলে চড়া নিয়ে সূর্যকান্তি ও ধরন্তি গ্রামের দুই যুবকের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে উভয় গ্রামের লোকজন রাতে কালিকচ্ছ বাজার এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার সময় একজনের মৃত্যু হয়। পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ খোলা আকাশে ৮ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ককটেলের আঘাতে ওই কলেজছাত্র নিহত হয়ে থাকতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে ৫০-৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত বেশ কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


মন্তব্য