ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫

বিএনপি
  © টিবিএম ফটো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে উপজেলা বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পাঁচজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতদের নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৭ এপ্রিল) নাসিরনগর কলেজ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতাকর্মী ও আহতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মুলত উপজেলা বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখনের সঙ্গে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান মামুন এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। গত কয়েকদিনে একরামুজ্জামানের সমর্থক ও মামুনের সমর্থকেরা বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার হাতাহাতি ও বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছে। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুপক্ষের কর্মীরা উপজেলা সদরে সরকারি কলেজ মোড়ে মুখোমুখি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বুধবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহআলম পাঠানকে হুমকি প্রদান করে একরামুজ্জামানের অনুসারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এনামুল হক সুমন ও তার সাথে থাকা নিউটন এবং সাদেক।

হুমকির বিষয়টি গতকাল বুধবার বিকেলে শাহআলম পাঠান উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের জানালে, বিএনপির একপক্ষের লোকজন উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় একরামুজ্জামানের অনুসারীরা তার নিজস্ব বাসভবনে অবস্থান করছিল। একরামুজ্জামানের বাসভবন ও উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় কাছাকাছি হওয়ায় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে মহড়া। তবে ঐদিন বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পরদিন (২৭ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদরের দাঁতমন্ডল গ্রাম থেকে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান শেষে নাসিরনগর সদরে ফেরার পথে বিএনপির দুইপক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এসময় দুই পক্ষের তিনজন গুরুতর আহতসহ পাঁচজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

আহতরা হলেন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এম নাসির উদ্দিন, সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হান, যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জামাল মিয়া, উপজেলা জাসাসের সদস্য সচিব মো. সাদেক ও বিএনপি কর্মী শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল।

এ বিষয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান মামুন বলেন, নাসিরনগর বিএনপিতে আমার কোন গ্রুপ নেই। বরং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে কিছু পোষা লোকের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ড করছেন একরামুজ্জামান সাহেব। এসবের বিরোধীতা করছে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তিনি ঢাকায় বসে কমিটি করে রাজনীতি করতে চায়। মূলত কমিটি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে।

আহত ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হান দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে একরামুজ্জামান সুখনকে প্রতিহত করতে চেয়েছে বিএনপির কিছু বিপদগামী কর্মী। আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান বলেন, নাসিরনগর উপজেলা বিএনপিতে কোন বিরোধ নেই। উপজেলা বিএনপির কোন নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেনি। আমরা দেশনায়েক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। ছাত্রদলের গুটিকয়েক নেতাকর্মীর মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জেরে এ সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে।

সংঘর্ষের বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখন বলেন, নিজ দলের নেতাকর্মীদের এমন আচরণে আমি হতবাক ও বাকরুদ্ধ হয়েছি। আজ নিজ দলের লোক হয়েও আ.লীগের ইন্ধনে বিএনপির কিছু লোক আমার নিরপরাধ কর্মী সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলা করে গুরুতর আহত করেছে। যা খুবই হতাশার।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, আজ দুপুরে নাসিরনগর কলেজ মোড়ে বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে


মন্তব্য